আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন

পেয়ারা বাগান থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৬ লাখ টাকা

পেয়ারা বাগান থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৬ লাখ টাকা

পেয়ারা বাগান থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৬ লাখ টাকা

পেয়ারা বাগান থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৬ লাখ টাকা

সদর উপজেলার সেনভাগ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আতিকুর রহমান ২০০৩ সালে এইচএসসি পাশ করার পর কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ান। ডেন্টাল কোর্স শেষ করেও কোন কাজ জোটেনা তার। ইত্যবসরে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কৃষি বিষয়ক প্রতিবেদন দেখে চাষাবাদে অনুপ্রানীত ও উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেন।
২০০৯ সালে ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেয়ারা চাষ করেন। এরপর আর তাকে কষ্ট করতে হয়নি। বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় দুই লাখ টাকা। তার পেয়ারা বাগানে কাজ করে এখন অনেকেই সাবলম্বি হয়েছে। এছাড়া স্কুল কলেজে পড়–য়া ছেলেরাও এই বাগানে শ্রম দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আতিক সবার বড়। দুই বোনের এক বোনকে অনেক আগেই বিয়ে দিয়েছে। ছোট বোন আরিফা বাগাতিপাড়ার তমালতলা কৃষি কলেজ থেকে কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করে ভাইকে এ কাজে সহযোগিতা করেছে।

 

পেয়ারা চাষী আতিকুর রহমান জানান, ২০০৯ সালে ১০ বছরের চুক্তিতে ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে থাই-৩ জাতের পেয়ারা গাছ লাগান। এজন্য জমি মালিককে প্রতি বছর বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা হিসাবে ৮৪ হাজার টাকা দিতে হয়। বাগানের বয়স ৩ বছর হয়েছে। প্রতি বছর তার বাগানে শ্রমিকদের বেতন, সার, সেচসহ প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা উৎপাদন খরচ হয় । বছরে পেয়ারা বিক্রি করে আয় হয় ৩০ লাখ টাকা। প্রতিদিন ২০ কার্টুন করে পেয়ারা তোলা হয়। প্রতি কার্টুনে ৫০ কেজি করে পেয়ারা রাখা হয়।
পেয়ারা বিক্রি হয় কেজি প্রতি ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে। গত তিন বছরে তার বাগানের প্রায় ৯২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা তার বাগানেই পেয়ার কিনতে আসে। তারা নিজেরাই এখান থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকার কাওরান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যায়। সারা বছরই তার বাগানে পেয়ারা পাওয়া যায়। পেয়ারা উত্তোলনে তার বাগানে ১৫ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।
তিনি বলেন, কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ খাদ্য তৈরীর উদ্দেশ্যে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পেয়ার চাষ করছেন। পাশাপাশি বাগানে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। বাগানে ব্যবহারে উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরীর জন্য বাড়ীতে গরুর খামার করেছেন। খামারের গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে বাড়ীতে রান্নার কাজ শেষে ওই গোবর উৎকৃষ্ট সার হিসাবে বাগানে ব্যবহার করছেন। এতে তার খরচও অনেকাংশে সাশ্রয় হচ্ছে। আতিকুর রহমান বলেন, বাগানের পরিধি বাড়াতে আরো ৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে পেয়ারা গাছের চারা রোপন করেছেন। এজন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান।

 

ঢাকার কাওরান বাজার,ফল ব্যবসায়ী কিরন খান জানান, তিনি নিয়মিত আতিকের বাগান থেকে পেয়ারা কিনতে আসেন। কখনও কখনও পেয়ারা কার্টুনজাত করে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। তার বাগানের পেয়ারা মিষ্টি ও স্বাদযুক্ত। এছাড়া কীটনাশক মুক্ত ও ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ খাদ্য হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে কোন সমস্যা হয় না। সেনভাগ লক্ষিèকুল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুর জানান, বিদেশে না গিয়েও আতিকুরের মত ফল ফুলের চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
বাগানের শ্রমিক রেজাউল করিম জানান, দিন-রাত ভ্যান চালিয়ে তার সংসারের অভাব ঘুচতো না। আতিকুরের পেয়ারা বাগান হওয়ার পর সেখানে কাজ পেয়ে আর অভাব নেই। তিন বছর ধরে বাগানে কাজ করছে। তার মাসে এখন ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এই বাগানে প্রতিদিন তারমত অন্তত ১৫/১৬ জন মানুষ শ্রম দিচ্ছে। এই বাগানে কাজ করে এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন এলাকার অনেকেই। এখন তাদের আর কোন অভাব নেই।

 

নাটোর সরকারী কলেজের অনার্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র মুকুল হোসেন জানান, কলেজ ছুটির পর অথবা অবসর সময়ে আতিকুরের পেয়ারা বাগানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি বাবার সংসারেও আর্থিক যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, পেয়ারা চাষের মাধ্যমে কৃষি কাজে আতিকুর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সময়মত সার, সেচ ও পরিচর্যা করে তার বাগানে পেয়ারার ফলন ভাল হয়েছে। বাগানের পরিধি বাড়াতে তাকে সার্বিক ভাবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় ৩১৭ হেক্টর জমিতে থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৬০ হেক্টর জমি। গত বছর জেলায় ২৯৭ হেক্টর জমিতে থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ হয়েছিল। কৃষি বিভাগ জানায়, এ জাতের পেয়ারার চারা প্রধানত মধ্য জৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে রোপণ করা হয়।
জীবনকাল ৫ থেকে ৬ বছর। তবে সঠিক পরিচর্যা করা গেলে এবং গাছে কোন রোগ বালাই না হলে আরো দু’-এক বছর পর্যন্ত এ গাছ ব্যবহার করা যায়। সাধারনত রোপন থেকে ১৬-১৭ মাস পর গাছে ফল ধরে এবং বাজারে তা বিক্রি করা যায়। অতিরিক্ত বর্ষা বাদে সারা বছরই এ জাতের পেয়ারা পাওয়া যায়। সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোজদার হোসেন জানান, আতিকের পেয়ারা চাষের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই পেয়ারা চাষে এগিয়ে আসার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। নাটোরে পেয়ারা চাষের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, এখানকার পেয়ারা ঢাকার মার্কেট দখল করে রেখেছে।

 

ঢাকার বৃহত্তম কাওরান বাজরসহ বিভিন্ন মার্কেটের চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগ পেয়ারা নাটোর ও আশে পাশের এলাকা থেকে সরবরাহ করা হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রহমত উল্লাহ সরকার জানান, পেয়ারা একটি দ্রুত বৃদ্ধি প্রাপ্ত গ্রীষ্মকালিন ফল। দেশের সর্বত্র কম-বেশি এ ফলের চাষ হয়। তবে থাই-৩ জাতের পেয়ারা সারা বছরই হয়।
আরও পড়ুন   সবুজ ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web