আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন

মরিচ গাছের বিভিন্ন ধরণের রোগবালাই ও প্রতিকার

মরিচ গাছের বিভিন্ন ধরণের রোগবালাই ও প্রতিকার

মরিচ গাছের বিভিন্ন ধরণের রোগবালাই ও প্রতিকার

মরিচ আমাদের দেশে একটি অর্থকারী ফসল। মরিচ চাষ করে বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। তবে মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মরিচের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হয়। আসুন জেনে নেই মরিচের কিছু রোগবালাই ও তাঁর প্রতিকার সম্পর্কে।

মরিচ গাছের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও বর্ণনা

১। অ্যানথ্রাকনোজ (Anthrancnose) রোগঃ

ক) Colletotrichum capsici নামক এক প্রকার ছত্রকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগ মরিচের প্রভৃত ক্ষতিসাধন করে থাকে।
খ) মরিচ গাছের নতুন ডগা ও ফুলের কুঁড়ি এই রোগে প্রথম আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ফুল প্রথমে নুইয়ে পড়ে এবং পরে শুকিয়ে ঝরে যায়।
গ) রোগের প্রকোপ বেশী হলে ফলের বোঁটা থেকে রোগ ডাটায় সংক্রমিত হয়ে এবং গাছের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে মরিচের ডাল আক্রান্ত হলে মরিচের আগা হতে শুরু করে নিচের দিকে শুকিয়ে যায়।
ঘ) আক্রাত গাছের বাকল প্রথমে বাদামী হয়ে যায় এবং পরে তাতে সাদা সাদা ডোরাকাটা দাগের সৃষ্টি হয়। রোগাক্রান্ত অংশে ছত্রাক কালো কালো কাঁটার মত সিটা (Seat) ও অসংখ্য এককোষী স্পোর উৎপন্ন করে।

২। ফিউজেরিয়াম উইল্ট (Fusarium wilt) রোগঃ

ক) এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় নিচের পাতাগুলিকে ঝুলে পড়তে দেখা যায়। এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই কাণ্ডের গোড়ার গ্রন্থিগুলির যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়ে যায়।
খ) যার ফলে গাছ খুব দ্রুত ঢলে পড়ে। পরে গাছের কচি কচি ডগাগুলি মরে বাদামী রঙ ধারণ করে।
গ) মাটির নিচ দিয়ে যেস্থান হতে পার্শ্বশিকড় গজায় তাঁর মধ্যেদিয়ে কাণ্ডে ছত্রাকের অনুপ্রবেশ ঘটে। ছত্রাক শিকড়কেও আক্রমণ করে যার ফলে শিকর নরম ও ভেজা মনে হয়।
ঘ) Fusarium annuum নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। যেসমস্ত উঁচু জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই সেসকল জমিতে এই সকল রোগ বেশি হয়।

আরও পড়ুন   লিচুর ফল ফেটে যাওয়া সমস্যা

৩। ভাইরাস (Virus) রোগঃ

ক) ভাইরাস রোগ আক্রান্ত গাছের পাতা কুঁচকিয়ে যায় এবং গাছ বামনাকৃতির হয়। পাতার শিরা ও উপশিরাগুলি সবুজ কণাবিহীন হয়ে যায়।
খ) এই রোগে আক্রমণের ফলে গাছে ফল কম ধরে এবং তা বিকৃত ও ছোট হয়।

মরিচ গাছের বিভিন্ন রোগের প্রতিকার সম্পর্কে

১। অ্যানথ্রাকনোজ (Anthrancnose) রোগঃ

ক) মরিচের এই রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য সুস্থ ফল হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ এবং আশেপাশের ধুতুরাজাতীয় আগাছা ধ্বংস এবং জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার প্রতি নজর রাখতে হবে।
খ) জমিতে বীজ বপনের পূর্বে মারকিউরিক ক্লোরাইড (mercuric chloride) দ্বারা অথবা গরম পানিতে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
গ) চারাগাছ মাটি হতে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং পরে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ডায়থেন অথবা অন্য কোন কীটনাশক জমিতে ছিটিয়ে এই রোগ দমন করা যায়।

২। ফিউজেরিয়াম উইল্ট (Fusarium wilt) রোগঃ

ক) গাছকে সতেজ রাখার জন্য পরিমিত পান জমিতে সেচ দেয়া উচিৎ।
খ) জমিতে মাটি সারিবদ্ধভাবে ৪৫-৬০ সেঃমিঃ উঁচু করে তাতে মরিচ গাছ লাগান উচিৎ।

৩। ভাইরাস (Virus) রোগঃ

ক) এই রোগ দমনের জন্য টমেটো ও আগাছাসমূহ ধ্বংস এবং ঘন ঘন কীটনাশক ছিটিয়ে জাবপোকা ধ্বংস করে ফেলেতে হবে।
খ) রোগ প্রতিরোধী জাতের বীজ জমিতে বপন করতে হবে। তাহলে এই রোগ সহজে দমন হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web