আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন
গবেষণাঃ উদ্ভিদ জীবপ্রযুক্তি ও জীন প্রকৌশল বিভাগ
এই বিভাগে মূলত প্ল্যান্ট টিস্যুকালচার, মিউটেশন ব্রিডিং জেনেটিক ট্রান্সফরমেশন এবং মলিকিউলার স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন উদ্ভিদের কাঙ্খিত চরিত্রিক বৈশিষ্টের সনাক্ত করণ ইত্যাদি বিষয়ের উপরগবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। উপরোক্ত প্রযুক্তিসমূহ প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল উদ্ভিদসহ অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন উদ্ভিদের উন্নয়ন ও নতুন জাতের উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। এন্থার কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে কলার ডব্লডহ্যাপলয়েড প্লান্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এ বিভাগের বিজ্ঞানীগণ। ইতিমধ্যে টিস্যুকালচার পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ফলজ (কলা, আনারস, আপেল, বেল, পেঁপে, আঙ্গুর, বরই, সৌদিতেঁতুল, ডালিম, কমলা, ড্রাগনফ্রুট ইত্যাদি), বনজ (শিশু, সেগুন, বট, খয়ের, রেইনট্রি, পাউলোনিয়া ইত্যদি), ঔষধি(ঘৃতকুমারী, বাসক, কালমেঘ, কুর্চি, সর্পগন্ধা, নিশিন্দা, নিম, তুলসী, লজ্জাবতী, ভীমরাজ, থানকুনি, স্টিভিয়া ইত্যাদি) শোভাবর্ধনকারী (গ্লডিওলাস, জারবেরা, সালভিয়া, অর্কিড, রজনীগন্ধা, ডাইএ্যান্থাস, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, নয়নতারা, গাঁদা ইত্যাদি) অর্থনৈকগুরুত্ব সম্পন্ন উদ্ভিদ (ধান, পাট, আখ, আদা, হলুদ, দারচিনি ইত্যাদি) এর ব্যাপক বংশবিস্তারের পদ্ধতি উদ্ভান করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও নতুন উদ্ভিদের বংশবিস্তর পদ্ধতি উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন উদ্ভিদের উপর জিন প্রকৌশল প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে (তামাক, আলু, পেঁপে ইত্যাদি) চারিত্রিক বৈশিষ্টের উন্নয়নের পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে ও অন্যান্য উদ্ভিদের উপর গবেষণা অব্যহত রয়েছে। এই বিভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন, বিনা, লালতীর সীড লিমিটেড, আন্তর্জাতিক পরমানু শক্তি সংস্থা, ফোরাম ফর নিউক্লিয়ার কো-অপারেশন ইন এশিয়া, জাপান পরমানু শক্তি সংস্থা ইত্যাদি এর সাথে সহযোগীতায় গবেষণা কাজ পরিচালনা করে আসছে। সাম্প্রতি বিনা, বাপশক, আন্তর্জাতিক পরমানু শক্তি সংস্থা, ফোরাম ফর নিউক্লিয়ার কো-অপারেশন ইন এশিয়া, জাপান পরমানু শক্তি সংস্থার সহযোগীতায় উচ্চফলনশীল, দিবস নিরপেক্ষ, আগাম পরিপক্কতা সম্পন্ন, রোগপ্রতিরোধী, সরুচাল ইত্যাদি বৈশিষ্ট সম্পন্ন বিনাধান-১৪ নামে একটি নতুন মিউটেন্ট জাতের উদ্ভান সম্ভব হয়েছে। এটাই বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র জাত যা কার্বনরশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
১। ইন ভিটরো মিউটাজেনেসিস এবং ডাবল্ড হেপ্লয়েডস পদ্ধতিতে কলা গাছের (Musa spp.) জাত উন্নয়ন
২। মিউটেশন ব্রিডিং এবং টিস্যু কালচার পদ্ধতির মাধ্যমে ধানের অধিক প্রোটিনযুক্ত উচ্চ ফলনশীল ও বিভিন্ন প্রতিকুলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন
৩। টিস্যু কালচার ও ইন ভিটরো মিউটাজেনেসিস পদ্ধতিতে বনজ, ফলজ, ভেষজ, ফুল উৎপাদনকারী এবং অন্যান্য অর্থকরী উদ্ভিদের অধিক হারে অঙ্গজ বংশ বিস্তার এবং উন্নয়ন
৪। জেনেটিক ট্রান্সফরমেশন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন অর্থকরী উদ্ভিদের উন্নত জাত উদ্ভাবন
৫। মিউটেশন ও বায়োটেকনোলজি পদ্ধতি ব্যবহার করে বায়োডিজেল উৎপাদনের লক্ষ্যে বীজের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বীজে তেলের পরিমান বৃদ্ধি জন্য নতুন জাত উদ্ভাবন।
১। ইন ভিটরো মিউটাজেনেসিস এবং ডাবল্ড হেপ্লয়েডস পদ্ধতিতে কলা গাছের (Musa spp.) জাত উন্নয়ন
কলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল যা সারা বছর বাজারে পাওয়া যায় এবং অর্থকরী ফসল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে এবং বসত-বাড়ীতে স্বল্প পরিসরে চাষ করা হয়ে থাকে। এর ক্যালরি এবং গুণাগুন অন্যান্য ফলের চেয়ে অনেক বেশী । বিশ্বের প্রায় ৯৫ মিলিয়ন টন কলা উৎপাদিত হয়ে থাকে যার প্রায় সবটাই স্থানীয় চাহিদা মেটানোর কাজে লাগে। কলার উৎপাদন ক্ষমতা অধিক পরিমানে বাড়ানো জন্য জৈব ও অজৈব কিছু উপাদান অন্তরায়। এই অবস্থা উত্তরনের জন্য কলার টিস্যু কালচার ও মিউটেশন টেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে নতুন লাইন/জাত তৈরীর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
ছবিঃ বিচি কলার এন্থার কালচার বিভিন্ন পর্যায়।
২। মিউটেশন ব্রিডিং এবং টিস্যু কালচার পদ্ধতির মাধ্যমে ধানের অধিক প্রোটিনযুক্ত উচ্চ ফলনশীল ও বিভিন্ন প্রতিকুলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন
ধান বাংলাদেশের প্রাচীন ফসল এবং প্রধান খাদ্য যা থেকে দেশের ১৫০ মিলিয়ন লোক শতকরা ৭৫ ভাগ ক্যালরি পেয়ে থাকে। ধান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির মুখে অন্ন প্রদানের জন্য দেশে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ মজবুত করার বিকল্প নেই। ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য আণুভূমিক কোন জায়গাও নেই। সীমিত জমি এবং পরিবর্তিত বৈচিত্রময় আবহাওয়ায় ধানের ফলন বৃদ্ধি এবং উৎপাদন টিকিয়ে রাখা দেশ এবং সরকারের জন্য একটা বড় ঝুকিপূর্ণ কাজ। ক্ষরা, বন্যা, অনাবৃষ্টি, বর্ধিত তাপমাত্রা এবং জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি ধান উৎপাদনের প্রদান অন্তরায়। উপরোক্ত সমস্যাগুলো দূর করে মিউটেশন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধানের উল্লেখিত সহনশীল নতুন জাতের উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
চিত্রঃ আগাম পরিপক্কতাসম্পন্ন ধান
৩। টিস্যু কালচার ও ইন ভিটরো মিউটাজেনেসিস পদ্ধতিতে বনজ, ফলজ, ভেষজ, ফুল উৎপাদনকারী এবং অন্যান্য অর্থকরী উদ্ভিদের অধিক হারে অঙ্গজ বংশ বিস্তার এবং উন্নয়ন।
উদ্ভিদের ক্ষুদ্র অংশ বা সেল বা টিস্যু ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ ও উপযুক্ত খদ্যোপাদান সম্পন্ন আবাদ মাধ্যমে মূলত গরপৎড়ঢ়ৎড়ঢ়ধমধঃরড়হ সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। দেশ-বিদেশের বহুগবেষক বিভিন্ন উদ্ভিদের সহজলভ্য বংশবিস্তার পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন বা করে যাচ্ছেন যা বানিজ্যিক চাষাবাদের জন্য বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। এছাড়াও জিন প্রকৌশল ও মিউটেশন প্রযুক্তি এই পদ্ধতির সাথে যুক্ত করে উদ্ভিদ প্রজাতির কাঙ্খিত বৈশিষ্টের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হচ্ছে।
চিত্রঃ টিস্যু কালচার উদ্ভিদের মুল উৎপাদন ও পলিব্যাগে চারা তৈরী
৪। জেনেটিক ট্রান্সফরমেশন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন অর্থকরী উদ্ভিদের উন্নত জাত উদ্ভাবন
কৌলিতাত্ত্বিকভাবে রূপান্তরিত উদ্ভিদকে একটা পদ্বতির মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়, যেখানে ভিন্ন উৎস থেকে জিন এনে ফসলের সব জিনের সাথে ঐসব জিনগুলো জুড়ে দিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন উদ্ভিদ তৈরী করা হয়। অংৎড়নধপঃবৎরহ ঃঁসবভধপরবহং এর যে বাহক ব্যবহার করা হয় এর ঞ. উঘঅ থেকে টিউমার উৎপাদনকারী জিনগুলোকে অপসারন করে তৎস্থলে কাক্ষিত ডিএনএ খন্ড জুড়ে দেয়া হয়। এরকম প্লাজমিড শুধু কাঙ্খিত জিনকে উদ্ভিদে পৌঁছে দিতে পারে কিন্তু কোন টিউমার তৈরী করতে পারে না। এই পদ্ধতির একটা অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হলো সেল কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদতৈরীর সহজলভ্যতা ও উপযোগী উদ্ভিদরূপান্তর পদ্ধতির ব্যবহার যার মাধ্যমে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের সন্নিবেশ ঘটবে। বিজ্ঞানীরা জিন প্রকৌশল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন উদ্ভিদ তৈরীর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
চিত্রঃ বিভিন্ন ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদে টিস্যুতে গাসজিনের প্রকাশ
৫। মিউটেশন ও বায়োটেকনোলজি পদ্ধতি ব্যবহার করে বায়োডিজেল উৎপাদনের লক্ষ্যে বীজের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বীজে তেলের পরিমান বৃদ্ধি জন্য নতুন জাত উদ্ভাবন।
বায়োডিজেল একটা বহুবিধ ব্যবহার উপযোগী ডিজেল উৎপাদনকারী বহুবর্ষজিবী উদ্ভিদ যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে খুব ভাল জন্মে। এটা দ্বিতীয় প্রজন্মের নবায়নযোগ্য এনার্জি যা রাসায়নিক গঠন আকারে সূর্যের আলোতে উদ্ভিদে সংরক্ষনের মাধ্যমে সহজলভ্য করে রাখা সম্ভব। এই গাছের ফলের বীজ থেকে ডিজেল পাওয়া যায় বিধায় এর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গাছের উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এরা অনুর্বর, প্রান্তিক ও পতিত জমি এবং রুঢ় পরিবেশেও ভালভাবে জন্মাতে ও বেঁচে থাকতে পারে। হয়ত একদিন বিশ^ব্যাপী তেলের সংকট দেখা দিতে পারে তাই উদ্ভিদ থেকে ডিজেল উৎপাদন একটা উল্লেখযোগ্য পছন্দনীয় পথ হতে পারে। এই প্রকল্পের মূলত উদ্দেশ্য হলো মিউটেশন টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন জাতের উদ্ভাবন যা বর্তমান অবস্থার চেয়ে অধিক পরিমানে ডিজেল উৎপাদনে সক্ষম হবে/সারাবছর উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে/রোগ-বালাই প্রতিরোধী হবে।
চিত্রঃ বাগভেরেন্ডা উদ্ভিদ