আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন
ফুল সবার কাছেই আকর্যনীয়। ফুলের রূপ আর সৌরভ মনকে প্রফুল্ল রাখে। পুষ্প প্রেমী মানুষেরা প্রায়ই বাগান বা টবে ফুলের চাষ করে থাকেন। ভালো ফুল ফোটাতে গাছের যেমন যত্নের প্রয়োজন তেমনি কোন সময়ে কি ফুল ভালো ফোটে তার সম্যক জ্ঞান থাকাও প্রয়োজন। যেমন বর্ষায় চাষ করলে ভালো হবে বেলি, জুঁই, চাঁপা, জিনিয়া, ছোট সূর্যমুখী, মালতীলতা ইত্যাদি অন্যদিকে শীতকালে গোলাপ, গাঁদা, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা। আর গ্রীষ্মকালে রজনীগন্ধা, সূর্যমুখী, গন্ধরাজ, মণিকুন্তলা। তবে যারা সারা বছর ফুলের জন্য বাগান করেন তারা লাগাতে পারেন সাদা কাঞ্চন, জবা, কামিনী, করবী, অলকানন্দা, জয়তী, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী বা সন্ধ্যামণি ইত্যাদি।
ফুল গাছের পরিচর্যা
অন্যান্য গাছ থেকে ফুল গাছের বেশি খাদ্য প্রয়োজন হয় আর সূর্যের আলো সকল ধরণের গাছের জন্যই খাদ্যের মূল উৎস। ফুল উৎপাদনে গাছের অনেক শক্তি ব্যায় হয় বলেই ফুল গাছের জন্য সূর্যের আলো বেশি দরকার হয়। তাই প্রতিদিন গড়ে ৭/৮ ঘণ্টা রোদ থাকে এমন জায়গায় থাকা ফুল গাছ অনেক বেশি ফুল দিতে সক্ষম। ফুলের গাছ ছাদে থাকলে পর্যাপ্ত রোদ পাবে আর বারান্দায় বা ঘরে থাকলে তা দক্ষিণ দিকের বারান্দায় বা জানালার পাশে রাখুন। কেননা দক্ষিণ আর পশ্চিম মুখী বারান্দায় বা জানালায় দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ থাকে।
আপনার ফুল গাছের ধরণ অনুযায়ী সঠিক আকারের পাত্র নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফুল গাছের জন্য মাঝারি বা একটু বড় আকারের পাত্র বা টব উত্তম। তলানিতে ছিদ্র যুক্ত টব আবশ্যক যেন বাড়তি পানি জমে না থেকে বেড়িয়ে যায়। কেননে টবে পানি জমে থাকলে তা গাছের জন্য ক্ষতির কারণ। আর প্রয়জনে টব পরিবর্তন ও জরুরী। যখন দেখবেন গাছের শিকড় তলানির ছিদ্র দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসবে তখন তা পরিবর্তন করে ফুল গাছ অন্য টবে প্রতিস্থাপন করে নিবেন।
বাগানের বা টবের ফুল গাছ থেকে বেশি ফুল পেতে আপনাকে অবশ্যই মাটির দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। মাটির পিএইচ এর সঠিক মাত্রা আর উর্বরতা ফুল গাছের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই টবে চারা রোপণের পূর্বে দোঁআশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের এক ভাগ জৈব সার মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করে নিন। গাছের গোড়ার আগাছা সব সময় পরিস্কার করে রাখুন আর নিড়ানী দিয়ে গোড়ার মাটি মাঝে-মধ্যে আলগা করে দিবেন। মাটির আদ্রতা ঠিক রাখতে নিয়মত সঠিক পরিমানে পানি দিতে ভুল করবেন না।
প্রকৃতিপ্রেমি মানুষেরা রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সার ব্যবহারেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আজকাল প্যাকেটজাত জৈব সার পাওয়া যায় তবে আপনি চাইলে বাড়িতে নিজের হাতে জৈব সার বানাতে পারেন। এজন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন সাধারন কিছু উপকরণ যেমন, ডিমের খোসা, কলার খোসা, পরিত্যাক্ত টি ব্যাগ ইত্যাদি। সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পেষ্ট করে নিন, আপনার কাছে মিকচার মেশিন না থাকলে ব্লেন্ডারেই করতে পারেন। উপাদান গুলো পেষ্ট করে তা রোদে শুকিয়ে নিন এবং বিভিন্ন ধাপে পরিমান মত ব্যবহার করতে পারেন। আর বিশেষ করে চিনি মেশানোর আগেই ব্যবহৃত চায়ের পাতি সংগ্রহ করবেন কেননা পাতিতে লেগে থাকা চিনি বিভিন্ন পোকাকে আকৃষ্ট করবে।
গাছের ফুল ও পাতা শুকিয়ে গেলে তা খুব সাবধানে কেটে ফেলবেন। এতে করে গাছের অতিরিক্ত শক্তি ব্যায় হবেনা আর পরবর্তি ফুল গুলো সঠিক মাত্রায় পুষ্টি পাবে। কোন ডাল মরে বা ভেংগে গেলে তাও কেটে ফেলাই উত্তম। মাঝে মাঝে গাছের পাতায় সাদা সাদা ছোপ পরে এগুলো একধরণের ছত্রাক। এমতাবস্তায় পানিতে সাবানের গুড়ো মিশিয়ে নরম সূতি কাপড় দিয়ে মুছে দিলে তা নিরাময় হয়ে যাবে। আর কিছু সাবানের গুড়ো টবের চারপাশে ছিটিয়ে রাখতে পারেন এতে করে পিপড়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে আপনার ফুল গাছ।
আশাকরি উপরোক্ত তথ্যগুলো আপনার ফুল গাছের যত্ন নিতে সহায়তা করবে। ছাদ বাগান বা টবে বিভিন্ন ধরণের ফুল, ফল ও ঘর সাজানোর গাছের যত্ন পরিচর্যা ও নিয়ম কানুন জানতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন। ধন্যবাদ!