আজ মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১২ অপরাহ্ন
বাড়িতে সহজে হাঁস পালন পদ্ধতি
বসতবাড়ীতে মুরগি পালনের পাশাপাশি অনেকেই সাথে কয়েকটি হাঁস ও পালন করে থাকে। বর্তমান সময়ে নারীরা বাড়িতেই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করছে। আজকের কৃষি আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করবে বাড়িতে সহজে হাঁস পালন পদ্ধতি নিয়ে।
হাঁস একটি গৃহপালিত পাখি । আমাদের দেশে গ্রাম অঞ্চলে অধিকাংশই হাঁস পালন করে থাকে । বাড়িতে হাঁস পালন করা খুবই সোজা । বর্তমানে হাঁস পালন করে অনেক বেকার যুবক তাঁদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছে । হাঁস মূলত জলচর জীব । এই কারণে অনেকে মনে করেন পানি ছাড়া হাঁস পোষা সম্ভব নয় । কিন্তু না হাঁস আপনি ইচ্ছা করলে পানি ছাড়াও পালতে পারেন । আমাদের দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনে খুবই উপযোগী । হাঁস পালন করলে একদিকে যেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং অন্যদিকে ডিম ও মাংস উভয়ই পাওয়া যায় । আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়িতে হাঁসের চাষ করতে পারেন । আসুন জেনে নেই কিভাবে আপনি আপনার বাড়িতে হাঁসের চাষ করবেন ।
হাঁস চাষে কি ধরণের খাঁচা বা ঘর বাছাই করবেন:
বাড়িতে হাঁস পালন করার জন্য আপনাকে প্রথমে উপযুক্ত ঘর তৈরি করতে হবে । এক্ষেত্রে বেশ কিছু পদ্ধতি আছে । এক্ষেত্রে আপনি হাঁসের ঘর বানানোর জন্য বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন । এছাড়াও যদি সম্ভব হয় তাহলে হাঁসের জন্য ইট দিয়ে ঘর তৈরি করে দিতে পারেন । এটি অনেক মজবুত হবে ।
হাঁসের জাত বাছাই করা:
বিশ্বে অনেক প্রজাতির হাঁস রয়েছে । এদের জাত যেমন ভিন্ন তেমনি নামও ভিন্ন ভিন্ন । তবে আমাদের দেশেও বেশ কিছু জাতের হাঁসের পালন করা হয়ে থাকে । আমাদের দেশে প্রচলিত হাঁসের জাত গুলো হল খাকি ক্যাম্পেবেল, ইন্ডিয়ান রানার, সিলেট মিটি ও নাগেশ্বরী, দেশী ইত্যাদি ।
হাঁস পালন করার সঠিক সময়:
বাড়িতে হাঁস পালন করার জন্য তেমন কোন নির্দিষ্ট সময় ধরাবাধা নেই । আপনি ইচ্ছা করলে বছরের যেকোন সময়ে হাঁস পালন করতে পারেন ।
কিভাবে হাঁস পালন করবেন ও সঠিক নিয়মে যত্ন নিবেন:
হাঁস পালন করার জন্য বেশী পরিশ্রম করতে হয় না । প্রায় সবধরনের জায়গায় হাঁস পালন করা যায় । নিচু, উচু, স্যাতসেতে বা জল এবং শুকনো খটখটে- প্রায় সবরকম জায়গায় হাঁস পালন চলবে । বরং জল বা স্যাতসেতে জায়গা হাঁসের বেশি পছন্দ । তবে হাঁস পালনের জন্য খেয়াল রাখতে হবে যেন হাঁসের ঘর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে ।
সঠিক নিয়মে হাঁস পালনের পদ্ধতি/কৌশল:
হাঁসের বাচ্চা পালনের ক্ষেত্রে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে । বাচ্চা যেখানে থাকবে সেখানে যেন তাপমাত্রা সবসময় সঠিক অনুপাতে থাকে । বাচ্চা ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে ব্রুডারের তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে । এছাড়াও হাঁসের সঠিক নিয়মে প্রজনন করতে হলে হাঁসকে পানিতে স্থানান্তর করতে হবে । তা না হলে পুরুষ এবং স্ত্রী হাঁস প্রজননে উৎসাহ পায় না । দশটি স্ত্রী হাঁসের জন্য একটি পুরুষ হাঁস যথেষ্ট । এছাড়া হাঁস ডিম পাড়বে কিন্তু সেই ডিমে বাচ্চা হবে না ।
হাঁসের খাবারের পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে খাবার প্রয়োগ:
হাঁসের খাবার সাধারণত সহজলভ্য । হাঁস পালনে আলাদা কোন সুষম খাবারের প্রয়োজন পড়ে না । বর্তমানে বাজারের ব্রয়লার মুরগি ও পশুখাদ্য মিক্সচারই তাদের সাধারণ খাবার । এছাড়াও শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, কেঁচো, শাপলা, ক্ষুদেপানা ছোট মাছ ও নানা ধরনের কীটপতঙ্গ মুক্ত অবস্হায় জলাশয়ে পাওয়া যায় । এগুলো হাঁসকে দিতে পারেন । হাঁসকে শুধু সকাল ও বিকালে পরিমিত পরিমান দানাদার খাবার সরবরাহ করলেই চলবে । তবে হাঁসের বাচ্চাকে খাবার দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবারের সঙ্গে অবশ্যই পানি দেওয়া হয় । তা না হলে শুকনো খাবার বাচ্চার গলায় আটকে বাচ্চা মারা যেতে পারে ।
হাঁসের রোগ বালাই ও তাঁর প্রতিকার:
বাড়িতে হাঁস পালন করার ক্ষেত্রে হাঁসের বেশকিছু রোগ বালাই দেখা যায় । হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরা । এই দুটি রোগের ব্যাপারে অবশ্যই টিকা দিতে হবে । তবে যদি কোন হাঁস অসুস্থ্য হয় তাহলে উক্ত হাঁসকে যথাশীঘ্রই অন্যান্য হাঁস থেকে সরিয়ে নিতে হবে । অসুস্থ্য হাঁসের সংস্পর্শে থাকলে বাকি সুস্থ হাস ও আক্রান্ত হতে পারে ।
কিভাবে হাঁস ও খাচার যত্ন ও পরিচর্যা করবেন:
বাড়িতে হাঁস পালনের ক্ষেত্রে হাঁসের বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে । হাঁসের ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে । হাঁসের ঘরের মেঝে, দেয়াল, বেড়া, ছাদ, ডিমের বাক্স, ডিমের ট্রে, পানির পাত্র এবং খাবার পাত্র ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । ঘরটি যেন সবসময় খোলামেলা থাকে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটিয়ে দিতে হবে । প্রয়োজনে বাজারে যে সমস্ত উন্নতমানের জীবাণুনাশক পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে ।
হাঁসের ডিম এবং মাংসের খাদ্য গুণাগুণ:
হাঁসের মধ্যে অনেক ধরনের খাদ্য গুণাগুণ বিদ্যমান । হাঁসের মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু । এদের মাংস ও ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ, প্রোটিন ও স্নেজাতীয় পদার্থ বিদ্যমান । হাঁসের ডিম আকারে বেশ বড় । এই কারণে খাদ্য সংস্থানের জন্যেও অনেকে হাঁসের ডিম পছন্দ করে থাকে ।
হাঁস পালনের সুবিধা:
মাছ চাষের জন্য পুকুরে হাঁস পালন করলে খুব কম খরচে অনবরত জৈবসার ছড়ানো যায় । বাড়িতে হাঁস পালনে খরচ অত্যন্ত কম । হাঁস পালন করলে সারা বছর ডিম পাওয়া যায় । খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৮০-৩০০ ডিম দেয় । হাঁসের রোগবালাই তুলনামুলক খুবই কম । ভবিষ্যতে দেখা যাবে হাঁস পালন আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে।