আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ অপরাহ্ন

বারান্দায় বা ছাদের টবে তরমুজ চাষের পদ্ধতি

বারান্দায় বা ছাদের টবে তরমুজ চাষের পদ্ধতি

বারান্দায় বা ছাদের টবে তরমুজ চাষের পদ্ধতি

তরমুজ গ্রীষ্মকালীন একটি জনপ্রিয় ফল। গরমে তরমুজ দেহ ও মনে শুধু প্রশান্তিই আনে না এর পুষ্টি ও ভেষজগুণ রয়েছে অনেক। প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে তরমুজে। রাতকানা, কোষ্ঠ-কাঠিন্য, অন্ত্রীয় ক্ষত, রক্তচাপ, কিডনিসহ নানা ধরনের অসুখ প্রতিরোধ করে। গরমের দিনে ঘামের সাথে প্রচুর লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়। তরমুজে প্রায় ৯৬ ভাগই পানি এবং প্রচুর খনিজ লবণ থাকায় দেহে লবণ ও পানির ঘাটতি পূরণ করে। আসুন, আমরা জেনে নেই কীভাবে এই উপকারী ফলটি চাষ করতে হয়।

স্থান নির্ধারণ
 

বাসার বারান্দায় বা ছাদে এমন একটি স্থান বেছে নিন যেখানে প্রচুর আলো বাতাস পায়। 

টবে তরমুজ চাষের পদ্ধতি  

চাষের জন্য টব বা প্লাস্টিক অথবা কাঠের কনটেইনারও ব্যবহার করা যায়। মাঝারি সাইজের একটি টব বেছে নিন। প্লাস্টিকের বালতিতেও করতে পারেন।
 

মাঝারি আকৃতির টবে ৪টি গাছের চাষ করা সম্ভব। মূলত টবের মধ্যে গাছ থাকবে, কিন্তু তরমুজ টবের পাশের ফ্লোরে বিছানো অবস্থায় থাকবে। 

মাটি প্রস্তুত
 

দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি সব চাইতে উপযোগী৷ মাটিতে প্রচুর জৈব সার থাকতে হয়। এক ভাগ মাটি ও এক ভাগ জৈব সার নিয়ে ভালোভাবে ঝুরা করে মিশিয়ে নিন। মাটি খুব শুকনো হলে একটু পানি দিয়ে ভিজিয়ে মেশান।


বীজ প্রস্তুত
 

শীতকালে খুব ঠান্ডা  থাকলে বীজ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত পানিতে ভিজিয়ে রেখে মাটির পাত্রে রক্ষিত বালির ভেতরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরোদ্গম হয়। বীজের অঙ্কুরোদ্গম দেখা দিলেই ওই বীজ বীজতলায় স্থানান্তরিত করা উচিত।

বীজ রোপণ
 

ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় হলো তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। বীজ রোপণের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম। শীতের শেষে মধ্য ফেব্রুয়ারি বীজ বপন করা যায়।

আরও পড়ুন   ছোট আকারে বাগানে আঙ্গুর চাষ


যত্ন

বিশেষ করে প্লাস্টিকে কন্টেইনার ব্যবহার করলে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়া জন্য আগেই কন্টেইনারটিতে কয়েকটি ছোট ছিদ্র করে নিতে পারেন।বীজ বপনের পর অঙ্কুরোদ্গমের জন্য একটি হালকা পানি দেয়া দরকার এবং পরবর্তী সময়ে পানির অভাব হলে ৮-১০ দিন পরপর অবস্থা বুঝে পানি দিতে হবে। শুকনো মৌসুমে সেচ দেয়া খুবই প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যাতে পানি লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ফুল উৎপাদন ও ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আদ্রতা থাকতে হবে। তরমুজের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অঙ্গজ বৃদ্ধি পর্যায়, ফুল উৎপাদন ও ফল বড় হওয়ার সময় অবশ্যই পানি দিতে হবে। এ সময় আদ্রতার অভাব হলে ফলন ও ফলের গুণগত মান বিনষ্ট হতে পারে।প্রত্যেকটি গাছে চারটি শাখা রেখে বাকিগুলো কেটে দিতে হবে। গাছের শাখার মাঝখানের গিটে যে ফল হয় সেটি রাখতে হয়। চারটি শাখায় চারটি ফলই যথেষ্ট। সকাল বেলা স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ফুলকে পুরুষ ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফলন ভালো হয়।

ফসল তোলা
 

জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে তরমুজ পাকে। সাধারণত ফল পাকতে বীজ বোনার পর থেকে ৮০-১১০ দিন সময় লাগে। তরমুজের ফল পাকার সঠিক সময় নির্নয় করা একটু কঠিন। কারণ অধিকাংশ ফলে পাকার সময় কোনো বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায় না। তবে নীচের লক্ষণগুলো দেখে তরমুজ পাকা কি না তা অনেকটা  অনুমান করা যায়।

ফলের বোঁটার সঙ্গে যে আকর্শি থাকে তা শুকিয়ে বাদামি রং হয়।খোসার উপরে সূক্ষ লোমগুলো মরে পড়ে গিয়ে তরমুজের খোসা চকচকে হয়।তরমুজের যে অংশটি মাটির ওপর লেগে থাকে তা সবুজ থেকে উজ্জল হলুদ রংঙের হয়ে ওঠে।তরমুজের শাঁস লাল টকটকে হয়।আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে যদি ড্যাব ড্যাব শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে যে ফল পরিপক্কতা লাভ করেছে। অপরিপক্ব ফলের বেলায় শব্দ হবে অনেকটা ধাতবীয়।

আরও পড়ুন   ছাদে শীতের সবজি চাষ

সবশেষে

এটা টবে চাষের পদ্ধতি, তাই পোকা-মাকড় সংক্রমণ, বা চিকিৎসা ইত্যাদি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যেহেতু আপনি আপনার বাসার ছাদে বা বারান্দায় করবেন, তাই তা অবাণিজ্যিক। আর সেই জন্য কোন সমস্যা হলে তার চিকিৎসা করতে হলে উল্টো আরো ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। যদি বড় ধরনের ঝামেলা হয়, নতুন ভাবে চাষ করাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। 

ছাদে বাগানের জন্য ১২ মাসী তরমমুজের বীজ পাওয়া যায়। Krishi Store

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web