আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
বেকার সমস্যা সমাধানে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা “মাশরুম চাষ”
মাশরুম চাষ কী হতে পারে বেকার সমস্যা সমাধানের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা?
বর্তমান পরিস্থিতি লক্ষ্য করলে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, করোনার পরবর্তী সময়ে বেকারত্বের হার অনেক গুণ বেড়ে যাবে।এই গুরুতর সমস্যা সমাধানে আমাদের বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত “মাশরুম চাষ প্রকল্পে”।
মাশরুম চাষ বর্তমানে একটি লাভজনক শিল্প।ঘরের মধ্যে তাকে তাকে সাজিয়ে সামান্য শ্রমে,অল্প সময়ে এবং নূন্যতম পুঁজিতে বেকারত্ব দূরীকরণ, অধিক উপার্জন ও আত্নকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে মাশরুম চাষ।
উৎপাদন,কর্মক্ষমতা,সমস্যা এবং সম্ভাবনার ক্ষেত্রে মাশরুম চাষ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত তথ্য এই খাতটি বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই গুরুত্বপূর্ণ অমরত্ব উদ্ভিদের ব্যবহার শুরু হয় প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে।
মিশরীয়রা মাশরুমকে অমরত্ব উদ্ভিদের সাথে তুলনা করেছে।রোমানরা ভেবেছিল মাশরুম দেবতার খাবার।আবার, ফেরাউন আদেশ দিয়েছিল যে শুধুমাত্র সেই মাশরুম খেতে পারবে।এই রকম প্রচুর মিথ্যা ধারণা এখনো ঠিকে আছে।
মাশরুম শব্দটি ছত্রাক এবং ছাঁচের ফরাসি শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ১৬৫০ সালে প্যারিসের কাছাকাছি এক তরমুজ উৎপাদনকারী তার খেতে প্রথম মাশরুম লক্ষ্য করেন।তিনি বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং একচেটিয়া প্যারিসিয়ান রেস্তোরাঁ গুলোতে প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।সেই সময় মাশরুমের ডাক নাম দেওয়া হয়ে ছিল “প্যারেসিয়ান মাশরুম”।পরবর্তীতে ফরাসী উদ্যানের চাম্ব্রি আবিষ্কার করলেন যে, মাশরুম চাষের জন্য শীতল এবং আর্দ্র পরিবেশের দরকার।এরপরে ফরাসী বিশেষ করে প্যারিসের চারপাশের গুহাগুলোতে একটি বৃহৎ আকারের মাশরুম চাষের বিকাশ ঘটে।
প্যারিসের গুহায় চাষকৃত এই মাশরুম বর্তমান বিশ্বে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৩০.২ মিলিয়ন টন এবং আয় করছে ২৮০০ বিলিয়ন ডলার।বিশ্ব বাজারে এই মাশরুমের চাহিদা বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে এর পুষ্টিগুণ এবং ঔষধিগুন।বর্তমানে ঝিনুক মাশরুমের চাহিদা অনেক বেশি।কারণ এটি বারো মাস চাষ করা যাই। ঝিনুক মাশরুম বর্তমানে পাউন্ডে প্রায় ৬ ডলার বিক্রি হয়।প্রায় ২০০ বর্গফুট জমির ক্রমবর্ধমান অঞ্চলটি প্রতি ফসলে ৮০০ পাউন্ড বা প্রতি বছরে ৫০০০ পাউন্ড মাশরুম উৎপাদন করতে পারে এবং এর দাম আসে ৩০০০০ ডলার।যার কারণে মুনাফার জন্য ঝিনুক মাশরুম বেশি চাষ করা হয়।
এই দুর্দান্ত উপায় এবং অতিরিক্ত মুনাফা বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
দেশীয় বাজার ও রপ্তানি সম্ভাবনার উচ্চ চাহিদার কারণে বাংলাদেশেও মাশরুম চাষ বাড়ছে।বাংলাদেশে ২০১৮-২০১৯ চলাকালীন সময়ে ৪০০০০ মিলিয়ন টন মাশরুম উৎপাদিত হয়।যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে ঝিনুক,রিশি,মিল্ক ও বাটন মাশরুম।কিন্তু,সর্বাধিক চাষাবাদ হয়েছে ঝিনুক মাশরুমের।যা সারা বছর জন্মে।বেশিরভাগ অল্প শিক্ষিত বয়স্ক পুরুষ এবং গ্রামীণ মহিলারা বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ গ্রহণ করেছেন।
তাদের মধ্যে মাশরুম চাষের আগ্রহ বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে উৎপাদনের সহজলভ্যতা।
বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল এবং গমের উৎপাদন করা হচ্ছে। এই খড়ের মধ্যে মাত্র ১৫% (৫.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন) ব্যবহার করে ৭.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাশরুম বাংলাদেশের উৎপাদনহীন জমিতে উৎপাদন করা যায়। যার অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
মাশরুম উৎপাদনের জন্য খড় ছাড়া যেমন অন্যান্য কৃষি বর্জ্য, বর্জ্য কাগজ ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা মাশরুম উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সারা দেশে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের বিশাল সুযোগ রয়েছে।দেশের সীমিত জমি এবং বেকারত্বের কথা বিবেচনা করে মাশরুম উৎপাদনে সহযোগীতা করা হলে, পল্লী অর্থনীতির বিকাশের অন্যতম টেকসই বিকল্প হতে পারে “মাশরুম”। এই সেক্টরের বিকাশে পল্লী এবং আধা-শহুরে উভয় ক্ষেত্রেই বিবিধ ব্যবসায় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগকে আরো উন্নত করে তুলবে।
লেখকঃ জাকারিয়া মোহাম্মদ ইমন
ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিকস,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পরিবেশ ও সম্পদ অর্থনীতি বিভাগ।