আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন
সহজে শোল মাছ চাষ পদ্ধতি জেনে নিন। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে শোল মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ, জলাশয় নির্বাচন, মাছ পোনা সংগ্রহ, খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং রোগ প্রতিরোধের উপায়সমূহ।
শোল মাছকে আমরা ‘রাক্ষুসে মাছ’ বলে থাকি। শোল মাছ বাজারের দামি মাছ। এই মাছ দামি হলেও চাষে খরচ খুবই কম। শোল মাছ সব ধরনের দুর্যোগ বা প্রতিকূল পরিস্থিতি সহ্য করতে পারে। মা শোল মাছই নিজেদের মতো করে ডিম নার্সিং ও পোনা লালন করে।
পোনা মজুত বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে শোল মাছ চাষ না হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহের ওপর জোর দিতে হবে। বৈশাখ মাস শোল মাছের প্রজনন মৌসুম।
বৈশাখ মাসের প্রথম থেকে শোল মাছ বাচ্চা দিতে শুরু করে। বাচ্চাগুলো এক ঝাঁকে থাকে। সেই সময় হাওর-বাঁওড়, পুকুর থেকে সপ্তাহখানেক বয়সের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে।
পোনা পাওয়া না গেলে বড় শোল মাছ সংগ্রহ করে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে। এককভাবে প্রতি শতাংশে ১০টি দেয়া যেতে পারে। মিশ্র পদ্ধতিতে চাষের জন্য প্রতি শতাংশে ৪টি। একটি প্রাপ্তবয়স্ক শোল মাছ লম্বায় ২.৫-৩ ফুট হতে পারে।
পুকুর প্রস্তুতি যে কোনো পুকুরেই শোল মাছ চাষ করা যায়। তবে তাকে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে হবে। যে পুকুরে শোল চাষ হবে সে পুকুরে কচুরিপানা অথবা কলমিলতা থাকলে ভালো হয়।
কারণ শোল মাছ আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। তবে কচুরিপানায় যেন পুকুর ভরে না যায়। পুকুরের চারদিকে কমপক্ষে ৫ ফুট উচ্চতায় জাল দিয়ে বেড়া দিতে হবে। তা না হলে বর্ষাকালে শোল মাছ লাফিয়ে চলে যাবে।
খাদ্য হিসাবে শোল মাছ সাধারণত খৈল বা কুড়া দিয়ে বানানো খাবার খায় না। ছোট মাছই এর প্রধান খাদ্য। পোনা মাছের প্রিয় খাদ্য শুঁটকির গুঁড়া। সেজন্য পোনা মাছকে খাবার হিসেবে চিংড়ি শুঁটকির গুঁড়া ভালোভাবে পিষে দিতে হবে।
এভাবে ১৫ দিন খাওয়ানোর পর পোনাগুলো প্রায় ২/৩ ইঞ্চি হবে। ২/৩ ইঞ্চি পোনা মজুদের পর খাদ্য হিসেবে কার্পজাতীয় মাছের ধানীপোনা দেয়া যেতে পারে; সঙ্গে ছোট ছোট ব্যাঙ বা ব্যাঙাচি দেয়া যেতে পারে। আর বড় মাছের জন্য ছোট ছোট মাছ, তবে মরা টাটকা মাছ খেতে দিলে এরা খুব খায়।
মিশ্র চাষ আমাদের দেশে শোল মাছের একক চাষের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ এত কাঁচা মাছ, শুঁটকি, ব্যাঙ বা ব্যাঙাচি জোগান দেয়া সম্ভব নয়।
তাই মিশ্র মাছের সঙ্গে শোল মাছের চাষ করা যেতে পারে। ৬ মাসে একেকটি শোল মাছের ওজন ৭০০-১০০০ গ্রাম হওয়ার সম্ভাবনা আছে।রোগ হিসাবে শীতকালে শোল মাছে ক্ষত রোগ দেখা দেয়। তাই ওই সময় মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে পারেন।
মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি বা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। না হলে আগামী কয়েক বছর দেশীয় মাছের চিহ্ন খুঁজে পাবে না জনগণ।
শোল মাছ, যা বৈজ্ঞানিকভাবে Channa striata নামে পরিচিত, একটি মাংসাশী প্রজাতির মাছ যা এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রচলিত।
এই মাছের খাদ্যাভ্যাস তার দ্রুত বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নিই শোল মাছের খাদ্য তালিকায় কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকে।
শোল মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য প্রধানত ছোট মাছ, পোকামাকড়, কেঁচো এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী। প্রাকৃতিক পরিবেশে, শোল মাছ খাদ্যের জন্য অধিকতর নির্ভরশীল থাকে:
১.ছোট মাছ: শোল মাছ তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থানে ছোট মাছ শিকার করে খায়। এটি তাদের প্রধান খাদ্য উৎস।
২.পোকামাকড়: বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, যেমন জলের পোকা, শোল মাছের জন্য অতিরিক্ত পুষ্টির উৎস।
৩.কেঁচো: কেঁচো একটি সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর খাদ্য, যা শোল মাছ সহজেই গ্রহণ করে।
খামারে বা পুকুরে শোল মাছ চাষের ক্ষেত্রে, তাদের খাদ্য সরবরাহ করা হয় অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এখানে কিছু প্রধান খাদ্য উপাদান দেওয়া হল যা খামারে ব্যবহৃত হয়:
১.উচ্চ প্রোটিনযুক্ত পিলেট: খামারের শোল মাছের জন্য উচ্চ প্রোটিনযুক্ত পিলেট খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই পিলেট মাছের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
২.মাছের মাংস: মাঝে মাঝে শোল মাছকে ছোট মাছের মাংস খেতে দেওয়া হয়, যা তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।
৩.চিংড়ির মাংস: শোল মাছের খাদ্য তালিকায় চিংড়ির মাংসও অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যা তাদের জন্য একটি পুষ্টিকর বিকল্প।
শোল মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল নিয়মিত সময়সূচীতে খাদ্য সরবরাহ করা। সাধারণত দিনে দুইবার মাছকে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। প্রথমে সকালে এবং দ্বিতীয়বার বিকেলে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। খাদ্যের পরিমাণ মাছের আকার এবং ওজন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়।