আজ শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১১ পূর্বাহ্ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য বেগম আখতার জাহানের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘উচ্চ ফলনশীল (ঊফশী) পাট ও পাট-বীজ উৎপাদন এবং উন্নত পাট পচন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের পাট উৎপাদনকারী ৪৪টি জেলার ২শ’টি উপজেলাকে উক্ত প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর পাট উৎপাদনের জন্য ২ লাখ এবং পাট-বীজ উৎপাদনের জন্য ৫০ হাজার মোট ২ লাখ ৫০ হাজার জন চাষিকে বিনামূল্যে ভিত্তি ও প্রত্যায়িত পাট-বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, হ্যান্ড-স্প্রেয়ার ও রিবনার সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া প্রতি বছর ২০ হাজার জন চাষিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সনাতন পদ্ধতিতে পাটের একর প্রতি ফলন ছিল ১৮-২০ মণ। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি এবং উচ্চ ফলনশীল পাট-বীজ ব্যবহার করায় পাটের একর প্রতি ফলন ৩০-৩৫ মণে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে দেশী ও তোষা পাটের ‘জেনোম সিকোয়েন্সিং’ অর্থাৎ জীবন রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে ৫শ’ ফসলের ক্ষতিকারক একটি ছত্রাকেরও জীবন রহস্য উৎঘাটন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া গত ৫ বছরে পাট জাতীয় ফসল অর্থাৎ কেনাফ, মেস্তার ৫টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যান্ত্রিক রিবনার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পাট পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ইতোপূর্বে দেশে গড় ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হতো। তবে ২০১০ সাল থেকে দেশে পাট আবাদের জমি এবং ফলন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে গড়ে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ লাখ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়ে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হচ্ছে। পাটের জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সুফল কৃষক পর্যায়ে দ্রুত পৌঁছানোর লক্ষ্যে ‘পাটের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা’ নামে একটি প্রকল্পে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত জমিতে পাট চাষ সম্প্রসারণে ও গবেষণাকে আরও জোরদারকরণের জন্য ‘পাট ও পাট জাতীয় ফসলের কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তর’ প্রকল্প চলমান রয়েছে। আগামী ৩ বছরের প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পাট চাষ এলাকার নির্বাচিত ৯ হাজার পাট চাষিকে উন্নত প্রযুক্তিতে পাট আঁশ, বীজ উৎপাদন এবং উন্নত পচন পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে উক্ত পাট চাষি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। স্বল্প পানি যুক্ত এলাকায় পাট আঁশের মানোন্নয়নের জন্য চাষিদের বিনামূল্যে যান্ত্রিক রিবনার বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশে পাট উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘পাটনীতি’ প্রণয়ন করছে। এটি বাস্তবায়িত হলে উচ্চ ফলনশীল ও উন্নতমানের পাটচাষে পাট চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, উদ্বুদ্ধকরণ, উন্নত পাট-বীজসহ অন্যান্য উপকরণ যথাসময়ে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা ও পাট-চাষির উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের বন্ধ কলকারখানা চালুকরণ নীতির আওতায় বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীনে খালিশপুর জুট মিলস লিঃ খুলনা, জাতীয় জুট মিলস লিঃ সিরাজগঞ্জ, দৌলতপুর জুট মিলঃ খুলনা, কর্ণফুলী জুট মিলস এবং ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম পূর্ণ মাত্রায় চালু হওয়ায় প্রায় ৯ হাজার ৩৫০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটকল শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের বকেয়া পরিশোধ করে পাটকলে কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৮ হাজার ৯৬৭ জন দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিককে স্থায়ী করা হয়েছে এবং শ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজেএমসি প্রোডাক্টিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট কোর্সের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৭৭১ জন শ্রমিককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণে বর্তমান সরকার চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ধোলাই ভাতা, উৎসব ভাতা, টিফিন ভাতা, উত্তম হাজিরা বোনাস, শিক্ষা সহায়ক ভাতা বৃদ্ধি ও মৃত্যু বীমা পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সময়ে সময়ে সরকার পাট কেনাসহ শ্রমিকদের গ্র্যাচুয়িটি ও অন্যান্য পাওনা বাবদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সমূহের দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনকল্পে সরকার সম্প্রতি এখানে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, অবসর সুবিধার টাকা যেমন পরিশোধ করা যাবে তেমনি আসন্ন পাট মওসুমে বাজার মূল্যে পাট কেনা সম্ভব হবে।
সোর্স-বাসস