মুরগির জৈব নিরাপত্তা

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
ভূমিকাঃ বাণিজ্যিক লেয়ার বা ব্রয়লার খামার একটি লাভজনক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছোট খামারগুলো দেশের মহিলা ও যুব সম্প্রদায়ের জন্য লাভজনক একটি পেশা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে মারাত্মক কিছুরোগ লাভজনক মোরগ মুরগী পালনের জন্য বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে যা আকাংখিত মাত্রার উৎপাদনকে হ্রাস করছে। ভাল জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধর জন্য একটি পূর্বশর্ত। জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা হল সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার একটি অংশ যা অবশ্যই রোগ জীবাণুর বিস্তারের সম্ভবনাকে হ্রাস করে।
ব্যবহার পদ্ধতি
মানসম্পন্ন খাদ্য ও পানিঃ প্রস্ততকৃত খাদ্য যেন গুনগত মানসম্পন্ন হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাদ্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভালভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। আর্দ্র ও পরিবেশে সংরক্ষণ করলে খাদ্যে মাইকোটক্সিন উৎপন্ন হতে পারে। সেই সাথে অন্যান্য জীবাণু যেমন সালমোনেলা, ই কলাই, ককসিডিয়া ইত্যাদির সংক্রামণ হতে পারে। খাদ্য ও পানির পাত্র যেন মুরগির পায়খানা দ্বারা দুষিত না হতে পারে তার জন্য মুরগির উচ্চতা অনুযায়ী উপরের দিক থেকে পাত্র ঝুলিয়ে দিতে হবে। খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সংরক্ষণঃ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পোল্ট্রি উৎপাদন ও রোগ নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কঠিন ও ব্যয়বহুল নয়। নিচের বিষয়গুলো মেনে চললে সহজেই স্বাস্থ্যকর ভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যায়।
নিয়মিত পরিষ্কার পরিছন্নকরণঃ মুরগির খামারের শ্রমিকরা প্রতিদিন পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে এবং হাত পা জীবাণুমুক্ত করে শেডে প্রবেশ করবে। প্রমে অসুস্থ ও মরা মুরগি দ্রুত সরিয়ে ফেলবে এবং নিয়মিত মুরগির বিষ্ঠা পরিষ্কার করবে।
অযাচিত প্রাণীঃ খাদ্য এবং অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ইঁদুর, বিড়াল, ছুঁচো ইত্যাদি প্রাণীর বসবাসের জন্য খুবই সহায়ক। এরা নিজেরা বিভিন্ন রোগের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং মল মূত্রাদির মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে।
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণঃ পোকা মাকড় রোগের উৎস ও পরজীবি বা অন্য রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এক ব্যাচ শেষ করার পর খামারের সকল আর্বজনা, মাকড়সার ঝুল একত্রে করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে অথবা কম্পোস্টিং পিটে ফেলতে হবে। সকল যন্ত্রপাতি ও ঘর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়ার পর জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
হিংস্র জন্তু ও অন্যান্য পাখি নিয়ন্ত্রণঃ এরা বিভিন্ন সংক্রামক ও পরজীবি জনিত রোগের জীবাণু বহন করে। মৃত মুরগি যত্রতত্র ফেলে রাখলে সেগুলি খাওয়ার জন্য খামারে কাক বা অন্য বন্য পাখি, বন বিড়াল, শিয়াল কুকুর ইত্যাদি আসতে পারে। খামারের পরিছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করণের মাধ্যমে এবং বন্য পাখি নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রন করা অত্যাবশ্যক।
মৃত মুরগী সৎকারঃ মৃত মুরগির দেহাবশেষ নিজেই রোগের উৎসে পরিণত হয় যা খামারের অন্যান্য মুরগিতে এবং আশে পাশের খামারের সংক্রামণের উৎস হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন  ভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৃত মুরগি সৎকার করা যায়। যেমনঃ
  • পোড়ানোঃ সংক্রামক জীবাণুকে ধ্বংস করার সর্বোত্তম পদ্ধতি। বাণিজ্যিক ভাবে ধোঁয়াবিহীন, দুগন্ধবিহীন পোড়ানোর চুলি বাজারে সহজলভ্য।
  • গভীর গর্তে পুঁতে ফেলাঃ পরিবেশ আইন মেনে বড় গর্ত করে আবর্জনা গভীর গর্তে পুঁতে ফেলাই উত্তম। এতে শিয়াল, কুকুর জাতীয় প্রাণী বজ্যের্র নাগাল পাবে না। সাধারন বজ্যের্র জন্য ছোট গর্ত করে বিভিন্ন বর্জ্য নিঃস্কাশন করা যায়।
কম্পোস্টিং এর মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ কম্পোস্টিং বা পচানো হলো প্রাকৃতিকভাবে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়াটি চলার সময় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিত্যক্ত বজ্যের্র গাঁজন প্রক্রিয়ার ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় তাতে রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। এটি বায়বীয় ও তাপ সংবেদনশীল পোল্ট্রি খামার বর্জ্য ধ্বংসের একটি অন্যতম পদ্ধতি। কম্পোস্ট তৈরীর জন্য খামারের একপাশে একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে স্থানটির চারদিকে নির্দিষ্ট মাপের (দৈর্ঘ্য ৮ ফুট, প্রস্থ ৫ ফুট ও গভীরতা ৫ ফুট) ইট দিয়ে ঘিরে একটি পিট তৈরী করতে হবে। জৈব বর্জ্যের মিশ্রণ খড়, মুরগির দেহবিশেষ, বিষ্ঠা ও পানির অনুপাত হবে যথাক্র মে ১:১:১.৫:০.৫ (প্রতি স্তরে তিনভাগ পানি যোগ করতে হবে) উক্ত অনুপাত ঠিক রেখে মিশ্রণটি তৈরী হলে দ্রুত এবং গন্ধহীন ভাবে বর্জ্য কম্পোস্টিং হবে। মিশ্রণের তাপমাত্রা ৬০-৭০০ সে. উঠবে এবং বজ্যের্র নরম কোষকলার কম্পোস্টিং প্রক্রিয়া ১৪ দিনের মধ্যে সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।
পৃথকীকরণঃ অনুজীবের বিস্তার পৃকীকরণের মাধ্যমে ঠেকানো সম্ভব। রুগড়ব বা আক্রান্ত মুরগিকে স্বাত্স্থ্য নিরোগ মুরগি থেকে পৃক করে রাখা উচিত এবং নিরোগ মুরগিকে পরিচর্যার জন্য ভিন্ন শ্রমিক নিয়োগ করা উচিত। সবচেয়ে ভাল হয় রুগ্ন মুরগিকে বর্জ্য হিসেবে সৎকার করে ফেলা, কারণ এইসব রুগড়ব মুরগি আরোগ্য লাভ করলেও দীর্ঘ সময় ধরে জীবাণুবাহক হিসেবে কাজ করতে পারে।
ব্যক্তিগত পরিছন্নতাঃ ব্যবস্থাপক, সুপারভাইজার এবং খামারের মালিকগণকে পরিচ্ছন্নতা নিয়মাবলী অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। খামারে দর্শনার্থী প্রবেশ যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে যদি কোন দর্শনার্থী মুরগির শেডে প্রবেশ করতে চান তবে জুতা পরে জীবাণুনাশক দ্রবণে হাত পা ধুয়ে খামারে প্রবেশ করতে হবে।
টিকা প্রয়োগঃ মুরগিকে সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষার জন্য টিকা দেওয়া অত্যাবশ্যক। কিছু রোগ সঠিক সময়ে গুনগত মানসম্পন্ন টিকা প্রদানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সকল বাণিজ্যিক লেয়ার এবং ব্রয়লার খামারে সর্বত্র ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন   মুরগির জটিল রোগ নির্ণয়ে দেশি পদ্ধতি
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now