চন্দ্রমল্লিকা চাষ পদ্ধতি

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
শীতকালীন মৌসুমি ফুলের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকা রুপে ও সৌন্দর্যে গোলাপের মতই জনপ্রীয়। খ্রিস্টমাসের সময় এ ফুল ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমাম বলা হয়। জাপান ও চীনদেশই সম্ভবত চন্দ্রমল্লিকার আদি জন্মস্থান। এ ফুল নানা বনের্র ও নানান রঙ এর হয়ে থাকে। নানা রঙ  এর বাহার ও গঠনের জন্য একে শরৎ রানী বলা হয়। বাড়ির উঠান, বারান্দা, ছাদ ইত্যাদি সাজাবার জন্য চন্দ্রমল্লিকা সাধারনত ব্যবহৃত হয়।
জাতঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো-
  • বারি চন্দ্রমল্লিকা-১: এ জাতটি দেশের সবখানে চাষ করা যায়। প্রতিটি গাছে ৩০-৩৫টি ফুল উৎপাদিত হয়। ফুলের সজীবতা ৯-১০ দিন থাকে। ফুলের রং হলুদ।
  • বারি চন্দ্রমল্লিকা-২: সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ২০-২৫ দিনের চারা মাঠে বা পটে লাগানো হয়। গাছ প্রতি গড়ে ৩৫-৪০টি ফুল ধরে। ফুলের সজীবতা ১২-১৪ দিন থাকে। ফুলের রং সাদা।
রোপণ সময়ঃ জমি অথবা টবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর।
চন্দ্রমল্লিকা চাষ পদ্ধতিঃ চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের জন্য উর্বর হালকা দোআঁশ মাটি, উচু, শুষ্ক ও সহজে জল নিস্কাশিত হয় এমন জমি প্রয়োজন। দক্ষিণ খোলা জমি চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। জমিতে লাঙ্গল দেওয়া বা কোপানোর সময় জমিতে পরিমাণমতো পাতাপচা সার, পচা গোবর সার, হাড়গুড়া বা সুপার ফসফেট সার প্রয়োগ করে জমির সাথে মিশাতে হবে। জমিকে উত্তমরুপে কর্ষণ করে মাটি ঝুরঙুরে ও নরম করিয়া ১ ফুট বা ৩০ সেমি. দুরে দুরে চারা বসাতে হবে। চারা রোপণের পর জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে ও নিয়মিতভাবে সেচ প্রদান করতে হবে।
চন্দ্রমল্লিকার পরিচর্যাঃ
পানি সেচঃ চন্দ্রমল্লিকার চারা বিকেলে রোপণ করে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গোড়ায় বেশি পানি জমে না যায়। চারা রোপণের পর নিয়মিতভাবে পরিমানমতো সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
সারের নাম
পরিমান (প্রতি হেক্টরে=২৪৭ শতকে) (কেজিতে)
পচা গোবর/কম্পোস্ট
১০০০০
ইউরিয়া
৪০০
টিএসপি
২৭৫
এমওপি
৩০০
জিপসাম
১৬৫
বোরিক এসিড
১২
দস্তা
বেসাল সার সাকার রোপণের ৭-১০ দিন আগে এবং গোবর/কম্পোষ্ট অন্তত ১০-১৫ দিন আগে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। রোপণের প্রায় ২৫-৩০ দিন পরে ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর গাছের গোড়ায় চারপাশে একটু দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সার মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ প্রদান করতে হবে।
আগাছা পরিস্কারঃ বাগানের এবং টবের চন্দ্রমল্লিকা গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত খুড়ে আলগা করতে হবে এবং ঘাস আগাছা ইত্যাদি তুলে ফেলতে হবে।
খুটি দিয়ে ঠেকঃ দ্রুত গাছ বৃদ্ধি ও ঝোড়ো বাতাস থেকে গাছকে রক্ষার জন্য গাছের পাশে শক্ত কাঠি পুঁতে গাছের সঙ্গে আলতোভাবে বেধে দিতে হয়।
ডাল ছাটাইঃ চন্দ্র মল্লিকা একটি বা একাধিক ফুল নিয়ে ফুটতে পারে। যিনি একাধিক ফুল ফোটাতে চান তিনি শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকেই ছাঁটাই শুরু করবেন। এটা গাছের এমন সময় করতে হবে যখন গাছের উপর দিকের পাতার কোণ থেকে ডাল বেরোনোর আভাস দেখা যাবে। এতে ফুল তাড়াতাড়ি ও ভাল হয়। একটি বড় ফুল পেতে হলে আগার মুকুল রেখে অন্য মুকুল ও ডালপালা ভেঙ্গে দিতে হয়।
ডগা মোটা হলেঃ নাইট্রোজেন সারের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে গাছের ডগা মোটা হয়ে যায় এবং ফুল ফোটে না। এক্ষেত্রে টবের মাটি শুকিয়ে নিয়ে মাঝে মাঝে চুনের পানি ব্যবহার করতে হয়।
বড় ফুল পাবার উপায়ঃ চারা লাগানোর মাস খানেক পর গাছের অগ্রভাগ কেটে দিতে হবে। এতে করে গাছ লম্বা না হয়ে ঝোপালো হয়। চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা সাথে সাথে অপসারণ করতে হবে। বড় আকারের ফুল পেতে হলে ‘‘ডিসবাডিং’’ অর্থাৎ মধ্যের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হবে। আর মধ্যম আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুঁড়িটি অপসারণ করা উচিত।
রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
পাউডারী মিলডিও রোগ দমনঃ এ রোগ হলে গাছের পাতা ধূসর রঙ ধারণ করে। পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়। টিল্ট ২৫০ ইসি ২ মিলিলিটার বা ২ গ্রাম থিওভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
জাব পোকা দমনঃ জাব পোকা ফুলের প্রধান ক্ষতিকারক পোকা। জাব পোকা গাঢ় সবুচ, বেগুণী বা কালো রঙের হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রাপ্ত বয়স্ক উভয় অবস্থাতেই গাছের নতুন ডগা বা ফুলের রস চুষে খায় এবং গাছের বৃদ্ধি ও ফলনে মারাত্মক ক্ষতি করে। নোভাক্রন (০.১%) বা রগর (১%) প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।
শোষক পোকা দমনঃ শোষক পোক খুবই ছোট আকারের পোকা। ছাই রঙের এই পোকাকে খালি চোখে দেখা যায় না। এ পেকা পাতা ও ফুলের রস শোষণ করে। পাতা ও ফুল ষুকিয়ে যায় এবং আক্রমণ বেশি হলে গাছও শুকিয়ে যায়। এ পোকা দমুনের জন্য ২ মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
ফুল সংগ্রহঃ চন্দ্রমল্লিকা ফুল কুঁড়ি অবস্থায় তুললে ফোটে না। বাইরের পাঁপড়িগুলো সম্পূর্ণ খুলে গেছে এবং মাঝের পাঁপড়িগুলো ফুটতে শুরু করেছে এমন অবস্থায় ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে খুব সকালে অথবা বিকেলে দীর্ঘ বোঁটাসহ ফুল তোলা উচিত।
ফলনঃ জাতভেদে ফলন কম বেশি হয়। তবে প্রতি গাছে বছরে গড়ে ৩০-৪০টি ফুল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন   কালোজিরা চাষ পদ্ধতি
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now