আজ মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন
প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য আমাদের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। একজন মানুষের সারাদিনের ক্যালরি চাহিদার ২০-৩০% প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে আসা উচিত। অনেকেই ভাবেন, প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্যের ভাল উৎস মানেই কেবল মাংস। অথচ মাছ থেকে যে মাংসের সমান পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে,অনেকে হয়ত এই ধারনাটি মানতে চান না।মাংস এবং মাছ দুটোই হল প্রথম শ্রেণীর আমিষ জাতীয় খাদ্যের উৎস। বরং মাংস খাওয়ার চেয়ে মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। তাই,আমাদের দেশে নানারকম মাছ পাওয়া যায়। পুঁটি, ট্যাংরা, শোল, টাকি, রুই, কাতলা, কই, ইলিশ, বাইন প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়।পাশাপাশি,সামুদ্রিক মাছ এবং চাষের মাছও আছে। আমদের দেশে প্রোটিনের চাহিদা পূরনে মাছের অবদান অনেক খানি।তবে,অনেকেই কাটার ভঁয়ে মাছ খেতে চান না।অথবা মাছের গন্ধে মাছ খেতে চান না।কিন্তু স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির কথা চিন্তা করলে মাছ বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই।শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য মাছ সমান পুষ্টিকর। মাছে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-ডি,ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড,ভিটামিন-এ,সেলেনিয়াম,অপরিহার্য অ্যামাইনো এসিড সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
সঙ্গত কারণে নিয়মিত মাছ খাওয়ার সাথে হার্টের সুসাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে।মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ যা আমাদের হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য জরুরি।সপ্তাহে অন্তত ১ সারভিং ফ্যাটি ফিস রাখলে হৃদ রোগের ঝুঁকি অনেক খানি কমে যায়।
নিয়মিত মাছ খেলে দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়।মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মেটাবলিজম বাড়াতে এবং দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
মাছে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-ডি থাকে।তাই,যারা ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভুগছেন তারা নিয়মিত মাছ খেতে পারেন।আমাদের,দেশের শিশুরা প্রায়ই ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভুগে থাকে।তাই ছোট বেলা থেকে যদি শিশুদের মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস করানো যায় তবে,ভিটামিন-ডি এর অভাব অনেক খানি পূরণ করা সম্ভব।
নিয়মিত মাছ খেলে থাইরয়েড ফাংশন খুব ভাল থাকে। বিশেষ করে যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত নিয়মিত মাছ খাওয়া।মাছে থাকা সেলেনিয়াম থাইরয়েড ফাংশনকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্যও মাছ খুব জরুরি।গর্ভস্থ ভ্রুনের চোখ এবং ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। তবে,গর্ভবস্থায় অবশ্যয় সামুদ্রিক মাছ পরিহার করতে হবে।
নিয়মিত মাছ খেলে মেমরি ভাল থাকে।তাই,যারা,প্রায়ই ভুলে যান তারা মাছ খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
যারা খাদ্য তালিকায় নিয়মিত মাছ রাখেন তাদের অটোইমিউন ডিজিস যেমন : ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
মাছে থাকা ভিটামিন ডি গভীর ঘুম এবং ওজন কমানোর জন্য জরুরি।যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে এবং ওজন কমাতে সমস্যা হচ্ছে তারা সপ্তাহে অন্তত ৩ সারভিং মাছ খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
ছোট মাছে উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।যা,হাড়ের গঠনের জন্য ভীষণ দরকারি। সুতরাং,শক্তিশালী হাড় গঠনের জন্য ছোট শিশুদের নিয়মিত ছোট মাছ খাওয়ানো উচিত।
মাছের পুষ্টিগুণ বজায় রাখার জন্য মাছ অতিরিক্ত ভাঁজা উচিত নয়। গ্রিল,স্টিম বা হালকা ভেজে খেলে মাছের পুষ্টিগুণ বজায় রাখা যায়।
অনেক সময় রান্না করার পরও মাছের গন্ধ থেকে যায় বলে অনেকে মাছ খেতে চাননা। তাই,রান্নার পূর্বে মাছে কিছুটা লেবুর রস এবং লবণ দিয়ে ৫-১০ মিনিট মাখিয়ে রেখে পরে খুব ভালভাবে ধুয়ে নিলে এই উৎকট গন্ধ আর থাকবে না।
যারা ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত ফিস এন্ড ভেজিটেবল স্যুপ খেতে পারেন। এতে পুষ্টি চাহিদা এবং ক্ষুধা দুইই দূর হবে এবং ওজন দ্রুত কমবে।
যারা,একই ধরণের মাছ রান্না খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছেন,তারা মাঝে মাঝে মাছের কাবাব,কাটলেট বা ফিস ফিংগার করে খেতে পারেন।
আমেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশনের মতে সপ্তাহে অন্তত ২ সারভিং মাছ খাওয়া উচিত। আর,এর মধ্যে অন্তত ১ সারভিং ফ্যাটি ফিস রাখতে হবে।