শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

পাকা তালের উপকারিতা ও গুনাগুন

  • লাস্ট আপডেট : বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০
  • ৬০৯ টাইম ভিউ
পাকা তালের উপকারিতা
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পাকা তালের উপকারিতা ও গুনাগুন

এখন পাকা তালের সিজন তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো পাকা তালের উপকারিতা ও গুনাগুন নিয়ে সবাই মনোযোগ দিয়ে পুরো আর্টিকেল টি পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন।

তালগাছ সকলের পরিচিত। এর উচ্চতা ৩০-৬০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার রং সবুজ, দেখতে বড় পাখার মত। পাতার সংখ্যা ৫০-৬০টি পর্যন্ত হয়। অন্যান্য গাছের তুলনায় তালের পাতা আকারে বড়। বৈশাখ মাসে বাবুই পাখি তালগাছের পাতায় বাসা বাঁধে যা দেখতে খুব চিত্তাকর্ষক। দেশের সর্বত্রই কম বেশি এ গাছ জন্মে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম, বরেন্দ্র অঞ্চল, ভাওয়াল গড় ও লালমাই পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে এ গাছ জন্মে থাকে।

তালগাছ শাখাপ্রশাখাহীন একবীজ পত্রী উদ্ভিদ। এর বীজ সবচেয়ে বড়। সাধারণত ৬ প্রজাতির তাছগাছ দেখা যায়। স্ত্রী, পুরুষ উভয় গাছেই ফুল হয়। শুধুমাত্র স্ত্রী গাছেই ফল ধরে। ১২-১৩ বছর বয়স হলেই ফল আসে। কচি ফল সবুজ, পাকলে কমলা ও বেশি পাকলে লাল রঙের হয়ে থাকে। তাল কাঁচা ও পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। আষাঢ়, শ্রাবণ মাসে কাঁচা তাল প্রচুর পাওয়া যায়। কচি ফলের বীচি জেলির মত নরম ও বরফের মত স্বচ্ছ। কচি ফল সুস্বাদু ও মিষ্টি স্বাদের। এতে প্রচুর ভিটামিন এ ও সি থাকে। পরিপক্ক ফলের বীজে নারিকেলের মত শাস আছে। ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে পাকা তাল পাওয়া যায়। পাকা তালের রসের পিঠা, পায়েস, ক্ষীর খুব জনপ্রিয় খাবার।

তালগাছের কাণ্ড, বাকল, ফল ও পাতা অনেক উপকারী। তালের কাঠ খুব শক্ত, মজবুত ও টেকসই। ঘরের খুঁটি, আসবাবপত্র, বিভিন্ন গৃহস্থালী সামগ্রী ও নৌকা তৈরিতে তাল কাঠ অনন্য। বর্ষাকালে দেশের খাল-বিলে তালের নৌকা দেখা যায়। পাতা হতে পাতাপাখা, ঝুড়ি, মাদুর, ঘরের ছাউনি এবং বাকল হতে রশি, ব্রাশ তৈরি হয়। গরমের দিনে তাল পাতার পাখা খুব জনপ্রিয়। পুষ্পমঞ্জুরীর মাথা কেটে রস বের করা হয়। রস ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ। রস হতে মিছরি, গুড়, চিনি, ভিনেগার তৈরি হয়।

আরও পড়ুন  আমড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ

লোকজ চিকিৎসায় তালের ব্যবহার প্রচুর। কচি গাছ পিত্তাধিক্য, আমাশয়, গনোরিয়া নিরাময় করে। শিকরের রসের মূত্রকারক, কৃমিনাশক গুণ আছে। শিকরের নির্যাস শ্বাসতন্ত্র ও বাকলের নির্যাস দাঁতের সমস্যায় উপকারী।

তালের ফল এবং বীজ দুইই বাঙালি খাদ্য। কচি অবস্থায় তালের বীজও খাওয়া হয় যা তালশাঁস নামে পরিচিত । এই তাল পাকলে এর ঘন নির্যাস দিয়ে তালসত্ব, পিঠা, কেক তৈরী করা হয়। এগুলো অনেক সুস্বাদুও বটে। তাল গাছের কাণ্ড থেকেও রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়।

তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সহ আরও অনেক খনিজ উপাদান। এর সঙ্গে আরও আছে অ্যান্টি অক্সিজেন ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান।

তালসত্ব – তালের রস ও চিনি দিয়ে বানানো হয় তালসত্ব। এটি রোদে শুকিয়ে সারাবছর খাওয়া যায়। অনেকে ভাত ও দুধের সঙ্গে এই তালসত্ব খেয়ে থাকেন।

তালের জুস – তালের রস, দুধ, চিনি দিয়ে জুস বানানো যায়। তেল যেহেতু ভাদ্র মাসে পাকে, সেই সময়ের গরমে এই জুস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

তালের পিঠা- তালের ঘন নির্যাসের সঙ্গে ডিম, চালের গুঁড়া, গুড় বা চিনি এবং কখনো নারিকেল দিয়ে তালের পিঠা তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জে এই পিঠার ঐতিহ্য রয়েছে। তালের পিঠার সুন্দর একটি ফ্লেভার রয়েছে।

তালের কেক- কেকের সব উপকরণের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে কেক বানানো হয়। এর রং খুবই আকর্ষণীয় হয়। তালের কেকের মধ্যে চিনি কম এবং ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য ভালো খাবার হতে পারে।

পাকা তালের উপকারিতা

  • তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায়ও তাল ভূমিকা রাখে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • তাল ভিটামিন বি-এর আধার। তাই ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে।
  • তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ ভালো করতে তাল ভাল ভূমিকা রাখে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
একই রকম পোস্ট