আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ অপরাহ্ন
আপেল থেকে গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয়।
অ্যাপেলের রসে ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা
হয় আপেল সিডার ভিনেগার যা আপেল জুসকে অ্যালকোহলে পরিনত করে।
ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে অ্যালকোহল এসিটিক অ্যাসিডে পরিনত হয়ে অ্যাসিটো ব্যাকটেরিয়া জন্ম দেয়।
এ ভিনেগারে ৯৪% পানি, ১% কার্বোহাইড্রেট ৫% অ্যাসেটিক এসিড থাকে এবং কোনও ফ্যাট বা প্রোটিন নেই। ইহা ২২ ক্যালোরি সরবরাহ করে।
এটি শরীরের জন্য উপকারী। এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।
এসিটিক অ্যাসিড থাকার জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাদ সাধারণত টক হয় এবং রঙ হয় হালকা বাদামি।
এতে খনিজ লবণ, ভিটামিনস, মিনারেলস, অ্যামিনো অ্যাসিডস, অর্গানিক অ্যাসিডস, পলিফেনল কম্পাউন্ডস রয়েছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এর মধ্যে।
যখন Apple Cider Vinegar প্রস্তুতির ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির মেয়াদকাল আরো বাড়ানো হয়, তখন এতে বেশকিছু উপকারী এনজাইম, ইস্ট এবং এসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়ে যায়।
এই উপকারী উপাদানসমূহকে একত্রে “মাদার” বলা হয়।
সিডার ভিনেগার উইথ মাদার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং উপকারী।
আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার দেখতে ঘোলাটে ও তুলনামূলকভাবে ঘন হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানির সাথে দেড় (1½) চা চামচ (৭.৫ মিলি) আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে হবে।
পানির সাথে না মিশিয়ে সরাসরি পান করা যাবে না। পান করার পর অবশ্যেই ½ ঘন্টা দ্রুত হাটা ও ½ ঘন্টা ব্যায়াম করতে হবে।
যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে ২৫০ মিলি পানিতে দেড় (1½) চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে হবে।
আপেল সিডার ভিনেগার পান করার ২০-৩০ মিনিট পর অবশ্যই কিছু খাওয়া উচিৎ। ডা: জাহাংগীর কবিরের মতে,
আপেল সিডার ভিনেগার ১ চা চামচ ১ গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিবার খাবার খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে দিনে ২-৩ বার পান করতে হবে। এর সাথে লেবুর রস বা আদার রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
দীর্ঘ দিন ধরে আপেল সিডার ভিনেগার না খেয়ে মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে পান করলে ভাল। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার খেলে এর অম্ল গুণ শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
১. ডায়াবেটিস কমায় (রক্তে সুগারের পরিমান কমায়, ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং রক্তের সুগার ও ইনসুলিনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ার গতি কমায়।
বিশেষ করে Type-2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া শুরু করলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে সুগারের মাত্রা প্রায় ৩১% কমে যায়।
একাধিক গবেষণাতে দেখা গেছে, আপেল সিডার ভিনেগার সেবন করলে রক্তের সুগারের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন গ্রহণ না করে
২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে সকালে সুগারের এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাতে দেখা গেছে,
যে সকল লোক শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের আগে আপেল সিডার ভিনেগার পান করেন তাদের রক্তে সুগারের মাত্রা কম। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এর অ্যান্টি গ্লাইসেমিকের প্রভাব এর মূল চাবিকাঠি।
Type-2 ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে মাত্র ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমে ৪%।
যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারাও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ এই ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শুধু আপেল সিডার ভিনেগার পান করলেই হবে না, এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার (যেমন-ডিম, খাটি ঘি, বাদাম, শশা, শাক-সব্জি, টক ফল, তৈলযুক্ত মাছ, লাল চালের ভাত এক কাপ বা লাল আটার রুটি ১ টা ইত্যাদি) খেতে হবে
। আর প্যাকেটজাত খাবার, ভাজা-পোড়া খাবার, মিষ্টি জাতীয় ফল, সয়াবিন তেল দ্বারা রান্না করা খাবার, চিনি, ভাত ও রুটিসহ শর্করা জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে হবে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময়ে সহজে ক্ষুধা লাগে না। ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া রোগে আক্রান্ত ১৭৫ জনকে নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, রোজ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে, সেই সঙ্গে কমে পেটের মেদ।
তবে অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরিমাণও কমাতে হবে, শুধু ভিনেগারই ওজন কমাবে না।
নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ওজন কমে। অ্যাসিটিক এসিড আপেল সিডার ভিনেগারে থাকে, যা আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরের চর্বি জমতে বাধা দেয়।
প্রতিদিন ১ থেকে ২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ১২ সপ্তাহ খেলে ওজন কমানোর সাথে সাথে তলপেটের চর্বি কমে যায়।
আপেল সিডার ভিনেগার স্টার্চ পরিপাকে সাহায্য করে, ফলে রক্ত প্রবাহে ক্যালরির পরিমাণ কম হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে,
আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমাতে সাহায্য করে। ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরে ফ্যাট জমতে দেয় না, খিদে কমায়, হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয় এবং ফ্যাট বার্ন করে।
আপেল সিডার ভিনেগার উচ্চ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে যা ট্রাই গ্লিসারাইড (TG) কমাতে সাহায্য করে বলে প্রমাণ হয়েছে।
এছাড়াও আপেল সিডার ভিনেগার ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়ক। তাই নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে উচ্চ কোলেস্টেরল এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ।
তবে আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ২০০৬ সালে জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড দ্রুত রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
কিছু প্রমাণ রয়েছে যা অ্যাপল সিডার ভিনেগারের পক্ষে এই প্রমাণকে সমর্থন করে যে, সকালে খালি পেটে এই পানীয় পান করলে দ্রুত ওজন কমে এবং এটি চর্বি বা মেদ পোড়াতে সাহায্য করতে পারে।
এটি প্রাথমিকভাবে ডিটক্সাইফিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। সকালে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে তা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়।
যখন রক্ত চাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে তখন আপেল সিডার ভিনেগার খেলে রক্তচাপ কমে যাবে। তবে যাদের রক্তচাপ কম তাদের এই ভিনেগার থেকে দূরে থাকা উচিত।
বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে।
আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের লিভারের ফ্যাট বার্ন করে লিভারকে ভালো রাখে এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
প্রতিদিন খাবারের সাথে ১ থেকে ২ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে।
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়া এবং প্যাথোজেন মেরে ফেলে।
যে কারণে আমাদের শরীর নানা সংক্রমণ ও রোগভোগ থেকে মুক্তি পায়। তাছাড়া, আপেল সিডার ভিনেগার দীর্ঘ সময় খাবার সংরক্ষণ করতেও সাহায্য করে। অন্ত্র ভাল রাখে।
কিছু গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে, অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে জারণ চাপ এবং ফ্রি র্যাডিকেলগুলোর স্তর হ্রাস করে।
এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং, অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা কেবল চর্বি ঝরানো বা ওজন কমানোই নয়, পাশাপাশি শরীরের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রয়োজন হয় এটি।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, শক্তি বাড়ায়, ক্লান্তি কমাতে পারে,
ব্যথা দূর করতে পারে এবং ওয়ার্কআউট করার সময় শরীরকে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্যামিনাকে উন্নত করতে পারে।
অনেক সময় ব্যায়াম বা অধিক চাপ দেহে অবসাদ কারণ হয়ে দাড়ায়। আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
এতে থাকা পটাশিয়াম ও এনজাইম ক্লান্তভাবকে দূর করে। ১ গ্লাস পানিতে ১ বা ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেলে পুনরায় উদ্দীপনা ফিরে পাওয়া যায়।
আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ভিনেগার ক্যানসার কোষ নির্মূল ও টিউমার সারাতে ভূমিকা রাখে। তবে এটি এখনো সর্বব্যাপী স্বীকৃত নয়। এনিয়ে আরও গবেষণা চলছে।
প্রত্যেকেই প্রায় প্রতি নিয়ত বিভিন্ন ধরনের পেটের ব্যথায় ভুগে। এই সমস্যা দূর করতে আমরা আপেল সিডার ভিনেগার এর সাহায্য নিতে পারি।
১ টি কাপে অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে তার সাথে পানি মিশিয়ে খেলে পেটের ব্যথা চলে যাবে এবং ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন জনিত ডায়রিয়া দূর হবে। এতে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক গুন, পেকটিন যা অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করে।
যদি রাতে প্রায়ই পায়ের পেশিতে টান লাগে, তাহলে বুঝতে হবে শরীরে পটাশিয়াম এর ঘাটতি রয়েছে।
আর আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম। তাই ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করতে হবে, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যাবে (যাদের আলসার আছে তাদের জন্য নয়)।
½ কাপ কুসুম গরম পানিতে ½ কাপ আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে ১ ঘণ্টা পরপর কুলি করলে গলার ব্যথা কমে যাবে।
কারণ আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড জীবাণু ধ্বংস করে ও ইনফেকশনে বাধা প্রদান করে।
নিয়মিতভাবে ব্রাশ ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করার পরেও মুখের দুর্গন্ধ যাচ্ছে না? তাহলে তারা আপেল
সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
কুলকুচা করে বা ১ চা চামচ ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যাবে।
আপেল সিডার ভিনেগার সাধারণত ব্লিচিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি মাউথওয়াশ হিসেবেও কাজ
করে।
তাই আপেল সিডার ভিনেগার দাঁত সাদা ও দাঁতের রং ভালো করে এবং মুখে থাকা
ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার জন্য এর কোন তুলনা নেই।
তবে আপেল সিডার ভিনেগার অত্যধিক ব্যবহারে দাঁতের ক্ষতি হয়। তাই অতিরিক্ত ভিনেগার ব্যবহার
করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের টনিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অল্প পরিমাণ আপেল সিডার
ভিনেগার নিয়ে পানির সাথে বা গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে যেখানে ব্রণ সৃষ্টি হয়েছে, সেই স্থানে নিয়মিত
লাগালে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ব্রণ চলে যাবে।
পেডি-কিউর করতে কুসুম গরম পানিতে কিছু
পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পায়ের যত্নে সপ্তাহে ব্যবহার করা যাবে।
এছাড়াও সান ট্যান
রিমুভ করতে অলিভ অয়েল বা পানির সাথে অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে স্কিনে এপ্লাই
করলে সান ট্যান দূর হবে।
শরীরের বিভিন্ন অংশে মাঝে মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় এই সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে আপেল
সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায়।
নিয়মিত কিছুটা আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সংক্রামক স্থানটি
ভালোভাবে পরিষ্কার করলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর হবে।
ত্বকের অনেক সমস্যা যেমন ব্রণ, র্যাশ,
আঁচলি, মেছতা, নখের মধ্যে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন ক্ষতিকারক ছত্রাক, কান ও গলার ইনফেকশন দূর
করতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার হয়ে থাকে।
আপেল সিডার ভিনেগার চুলে ব্যবহার করলে চুল স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ও লম্বা হয়। পাত্রে পরিমাণ মতো
আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সম পরিমাণে পানি মিশিয়ে শ্যাম্পু করার পর মিশ্রণটি দিয়ে চুল
ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এতে করে চুলে কন্ডিশনিং হবে, তাছাড়া চুলের খুশকি যাবে এবং চুল
নতুন করে গজাবে।
আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামাটরি উপাদান। কালশিটে দাগ এর উপর এটির প্রলেপ
আস্তে আস্তে দাগ বিলীন করতে সাহায্য করে।
আবার ১ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার গোসলের ১০
মিনিট আগে সারা শরীরে মেখে রাখবেন। এতে করে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে। তাছাড়া গোসলের
পানিতে দিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
মন প্রফুল্লও হবে, রোদে পোড়া দাগও কমবে।
আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত পান করার অপকারিতা
দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার ভিনেগার খেলে এর অম্ল গুণ শরীরের ক্ষতি করতে
পারে।
বেশি পরিমাণে আপেল সিডার ভিনিগার খেলে দাঁত, ইসোফেগাস ও স্টমাক লাইনিং এর ক্ষতি হতে
পারে।
হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে।
সরাসরি গ্লাস থেকে এটি পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে তা দাঁতের সংস্পর্শে আসে। দাঁতের
এনামেল ক্ষয়ে গিয়ে দাঁত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
তাই অনেকেই স্ট্র দিয়ে সরাসরি আপেল সিডার
ভিনিগার পান করার কথা বলে থাকেন।
আপেল সিডার ভিনিগার বেশি ব্যবহার করলে চোখ, হৃৎপিণ্ড ও ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
যদি এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় তবে এটি ক্ষতিকর হবে না।
প্রতিদিন আপেল সিডার ভিনিগার খেলে অন্ধত্ব, টাক, পাকা চুল এবং পুরুষত্বহীনতা হতে পারে।
প্রতিদিন আপেল সিডার ভিনেগার খেলে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন-পেট খারাপ,
অম্বল, মাড়ি ফুলে যাওয়া, গলা ব্যথা ও এলার্জি।
ত্বকে এলার্জি থাকলে আপেল সিডার ভিনিগার ব্যবহারের ফলে ত্বকে জ্বালা-পোড়া হতে পারে।
আপেল সিডার ভিনেগার বেশি খাওয়ার ফলে রুচি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
পরিমাণের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেললে বমি বমি ভাব হতে পারে, এমন কি বমি হতে পারে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করার ক্ষেত্রে সতর্কতা
আপেল সিডার ভিনেগার কখনোই সরাসরি পান করা যাবে না। অবশ্যই পানির সঙ্গে মিশিয়ে
পাতলা করে পান করতে হবে। এই পানীয়তে অন্য কিছু ভুলেও মিশানো যাবে না।
বেশি বেশি বা খুব ঘন ঘন পান করা যাবে না, করলে তাতে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে।
ইহা পান করতে Straw বাবহার করা ভাল।
দীর্ঘ সময় ধরে আপেল সিডার ভিনেগার না খেয়ে মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে পান করলে ভাল।
বি. দ্র.: “আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারীতা” প্রবন্ধটি সম্পূর্ণই ইন্টারনেট থেকে
ডাউনলোড করে রচনা করা হয়েছে। প্রবন্ধটি খুব ভাল করে কয়েকবার পড়বেন এবং সে
মোতাবেক নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করবেন। অতিরিক্ত বেশী পান করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে লেখক
দায়ী থাকবেন না।
লেখক- বিজ্ঞানী ড. কে এম খালেকুজ্জামান
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব)
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি)