মুখী কচুর চাষ পদ্ধতি
আজকের কৃষির কাছে অনেকেই ফেসবুক পেইজে ইনবক্স করে থাকেন কীভাবে মুখী কচুর চাষ করবো। তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করছি মুখী কচুর চাষ পদ্ধতি নিয়ে।
মুখী কচুর জাত পরিচিতি
দেশি জাতঃ মুখী কচু বাংলাদেশের গুড়া কচু, কুড়ি কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু, ইত্যাদি নামে ও পরিচিত। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উন্নত জাতে মুখী কচু উদ্ভাবন করেছে, যেগুলোর বর্ণনা নিম্নরুপঃমুখী কচুর বপন/রোপণ প্রযুক্তি
রোপণের সময়ঃমধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মুখী কচু রোপণের উপযুক্ত সময়।
রোপণ পদ্ধতিঃএকক সারি পদ্ধতিঃ উর্বর মাটির জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১.৫ ফুট। অনুর্বর মাটির বেলায় সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১ ফুট ৪ ইঞ্চি রাখতে হয়।
ডাবল সারি পদ্ধতিঃ এ পদ্ধতিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২.৫ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২.০ ফুট বেশি উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আড়াই ফুট দূরে দূরে লম্বালম্বি দাগ টানতে হয়। এই দাগের উভয় পাশে ৪ ইঞ্চি দূর দিয়ে ২ ফুট পর পর বীজ লাগিয়ে যেতে হয়। এতে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব ২২ ইঞ্চি এবং এক সারির দুই লাইনের মধ্যে দুরত্ব হয় ৮ ইঞ্চি। এই পদ্ধতিতে বীজ লাগালে ফলন প্রায় ৪০-৫০% বেড়ে যায়। দুই সারির ৩ টি বীজ সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ উৎপন্ন করবে।
বীজের হারঃমুখীর ছড়া বিঘা প্রতি ৬০-৮০ কেজি (১৫-২০ গ্রাম ওজনের মুখী) প্রয়োজন হবে।
মুখী কচুর সার ব্যবস্থাপনা
মুখী কচুর ভাল ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি শতাংশ (ডেসিমাল) মাঝারি উর্বর জমির জন্য নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
সারের নাম | সারের পরিমাণ | মন্তব্য |
পচা গোবর/কম্পোস্ট | ৪০-৫০ কেজি | অধিকতর তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন। এলাকা বা মৃত্তিকা ভেদে সারের পরিমাণে কম-বেশী হতে পারে। |
ইউরিয়া | ১.২০-১.৪০ কেজি | |
টিএসপি | ০.৬১-০.৮১ কেজি | |
এমওপি/পটাশ | ১.২০-১.৪০ কেজি | |
জিপসাম | ০.৪-০.৫৩ কেজি | |
দস্তা | ০.০৪-০.০৬ কেজি | |
বোরণ | ০.০৪-০.০৫ কেজি |
প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, দস্তা ও বোরণ সার এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক পটাশ সার জমি তৈরির আগে শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও পটাশ সার চারা রোপণের ৩৫-৪০ দিন এবং ৬৫-৭৫ দিন এর মধ্যে পার্শ্বে প্রয়োগের মাধ্যমে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
মুখী কচু চাষে অন্যান্য প্রযুক্তি:
আগাছা দমনঃ
মুখী কচু ৬-৯ মাসের ফসল। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় জমিতে প্রচুর আগাছা জন্মে। পুরো উৎপাদন মৌসুমে ৪-৬ বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিবার উপরি সার প্রয়োগের আগে অবশ্যই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। চারা লাগানোর দুই মাস পর হতে প্রতি মাসে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
পানি সেচ ও নিষ্কাশনঃ
মুখী কচু খরা মৌসুমে লাগানো হলে বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য তো বটেই প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে মাটির প্রকারভেদে ১০-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে সেচ দেয়ার দরকার পড়ে না তবে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে হবে। মনে রাখতে হবে মুখী কচুর উচ্চ ফলনের জন্য প্রয়োজনীয় সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাসময়ে গ্রহণ করতে হবে।
গাছের গোড়ায় মাটি তোলাঃ
রোপনের ৪০-৪৫ এবং ৯০-১০০ দিন পর দুই সারির মাঝের মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।
মুখী কচুর সংগ্রহ ও পরবর্তী করণীয়:
ফসল সংগ্রহঃ
মুখি কচু ৬-৯ মাসের ফসল। কন্দ রোপনের ৬ মাস পর সেপ্টেম্বর (মধ্য ভাদ্র) মাসে আগাম ফসল তোলার উপযোগী। এরপর গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ ও গাছ ধীরে ধীরে মারা গেলে মুখি কচু তুলতে হয়। কোদাল দিয়ে মাটি খুড়েঁ মুখী সংগ্রহ করা হয়।
ফলনঃ
উচ্চ ফলনশীল বিলাসী জাতে গড় ফলন বিঘা প্রতি ১০৫-১২৫ মণ (মোট ফলনের ৭৫-৮৫% মুখি/corm এবং বাকীটা গুড়িকন্দ/cormel)।
পরিবহণ পদ্ধতিঃ চটের বস্তা/বাঁশের খাচাতে করে সাধারনত পরিনহন করা হয়।
পরিবহণের মাধ্যমঃ ভ্যান / গরুগাড়ী / ট্রাকটোর এর মাধ্যমে পরিবহন করা হয়ে থাকে।
প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ স্হানীয় পর্যায়ে বাজারজাত করার জন্য বর্তমানে চটের বস্তা ও বাঁশের তৈরী খাঁচা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
স্বল্প পরিসরেঃ ভালোভাবে সতর্কতার সাথে গুড়ি তুলতে হবে। কাটা, পচা, ক্ষতযুক্ত, ছোট-মাঝারি-বড় আকার দেখে আলাদা করে রাখতে হবে। ঠান্ডা ও ছায়াময় এবং বাতাস চলাচলের সুবিধাযুক্ত স্হানে স্তুপ করে বা মেঝেতে ছড়িয়ে মুখীকচু শুকানো যায়। ছায়ায় শুকানোর পর নাড়াচড়া করলে গুড়ির গায়ের মাটিসহ অন্যান্য ময়লা পড়ে গিয়ে গুড়ি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এরপর ঘরের ছায়াযুক্ত স্হানে মাচা বা কাঠের উপর রেখে শুকনো ঠান্ডা পরিষ্কার বালি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এভাবে মুখীকচু ৪/৬ মাস পর্যন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।