আজ শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন

দুগ্ধ খামার স্থাপনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি

দুগ্ধ খামার স্থাপনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি

মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য দুধ ও মাংসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ ও ১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন। তার বিপরীতে আমরা পাচ্ছি ৫১ মিলিলিটার ও ২০ গ্রাম মাংস। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দুধ ও মাংসের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে দুধ ও মাংসের ব্যাপক চাহিদা পূরণ করতে হলে আরও অনেক গাভীর খামার স্থাপন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
দুগ্ধ খামার বর্তমানে একটি লাভজনক শিল্প। গাভীর খামার বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্যবিমোচন, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশে দুধের চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
একটি পারিবারিক গাভীর খামার স্থাপন করতে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির ভেতরেই একটি আধা-পাকা শেড তৈরি করলেই চলে। গাভীর খামার স্থাপনে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। প্রয়োজনে দেশি ঘাস সংগ্রহ করে খাওয়ালেও চলে। অল্প পুঁজি দিয়ে গাভীর খামার শুরু করা যেতে পারে। একটি পারিবারিক গাভীর খামার দেখাশোনা করার জন্য আলাদা শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না।
গাভীর খামার স্থাপনের গুরুত্ব-
১. মানুষের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি করা;
২.খামার থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করা;
৩. শ্রম ও পুঁজির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা;
৪. গাভী দ্বারা আঁশজাতীয় খাদ্য এবং মানুষের খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশকে যথাযথ ব্যবহার করা যায়;
৫. ভূমির উর্বরতা সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিতে গাভীর খামারের গুরুত্ব অপরিসীম;
৬. গাভীর খামার সারা বছরের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে;
৭. গাভীর খামার মোটামুটি স্থায়ী ব্যবসা, অন্য যে কোনো কাজ অপেক্ষা শ্রেয়;
৮. পর্যাপ্ত দ্রব্য সামগ্রী যেমন- দই, ঘি, মিষ্টি ইত্যাদি উৎপাদনের ফলে দুগ্ধ খামার স্থায়ী ভালো বাজার সৃষ্টি করতে পারে;
৯. গোবর দ্বারা বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে জ্বালানি ও আলোর ব্যবস্থা করা যায়;
১০. ষাঁড় বিক্রি করে আয় বৃদ্ধি করা যায়।
তিনটি সংকর গাভী পালন খামারের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব
১. স্থায়ী মূলধন বিনিয়োগ
ক. জমি- নিজস্ব
খ. শেড/ঘর- নিজস্ব
গ. গাভী ক্রয় ৩টিী৬০,০০০/- =১,৮০,০০০/-
২. আনুষঙ্গিক ব্যয়
ক. ঘাস- নিজস্ব
খ. খড়-  নিজস্ব
গ. দানাদার খাদ্য (৬ কেজি/৩/দিন)
(৬ী৩ী৩৬৫ী২০) = ১,৩১,১৪০/-
ঘ. লেবার- নিজস্ব
ঙ. ওষুধ, টিকা ইত্যাদি =    ৩,০০০/-
মোট ব্যয় = ৩,১৪,৪০০/-টাকা
৩. আয়-
ক. দুধ বিক্রি থেকে- ১২ লিটার/গাভী/ দিন
(১২ী৩ী২৮০ী৩৫) = ৩,৫২,৮০০/-
খ. বছর শেষে ৩টি বাছুর বিক্রি থেকে আয়
(৩ী২০০০০)———-=   ৬০,০০০/-
প্রথম বছর শেষে মোট আয় = ৪,১২,৮০০/-
প্রথম বছরে মুনাফা = মোট আয়-মোট ব্যয়
৪,১২,৮০০- ৩,১৪,৪০০=৯৮,৪০০/- টাকা
দ্বিতীয় বছরে মুনাফা= ৯৮,৪০০ী১.৫ গুণ= ১,৪৭,৬০০/- টাকা

আরও পড়ুন   দুর্বা ঘাসের চমৎকার কিছু গুন

খামার স্থাপন পদ্ধতি
আদর্শ ব্যবস্থাপনার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও সঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমেই দুধ, মাংস উৎপাদন তথা গাভীর খামারকে লাভজনক করা সম্ভব।
১. খামারের সঠিক স্থান নির্বাচন যেমন-
– শুষ্ক ও উঁচু ভূমি -পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালো হতে হবে
– সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থা – প্রয়োজনীয় জমির প্রাপ্যতা
– সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা- পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ
– মাটির প্রকৃতি ভালো হতে হবে- আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা।
– জনবসতি থেকে দূরে
– রাস্তা থেকে দূরে
২. আধুনিক স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান তৈরি,
৩. উপযোগী জাত ও গাভী বাছাই করা,
৪. নিয়মিত টিকা প্রদান, কৃমিনাশক এবং প্রজনন   সমস্যাজনিত চিকিৎসা প্রদান,
৫. প্রজননের সঠিক সময় নির্ধারণ,
৬. নির্ধারিত রেশন মোতাবেক খাদ্য প্রদান করা,
৭. কাঁচা ঘাস ব্যবস্থাপনা,
৮. গর্ভবর্তী গাভী ব্যবস্থাপনা,
৯. বাছুর ব্যবস্থাপনা,
১০. সঠিক দুধ দোহন পদ্ধতি
১১. বাছুরের মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম বিশেষ করে এঁড়ে বাছুর,
১২. বাজার ব্যবস্থাপনা।
গাভী পালনের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web