ছাদে মিষ্টি তেঁতুলের চাষ পদ্ধতি
ক্রমশ বাংলাদেশে ছাদ কৃষি বেড়েই চলছে তাই আজকে আলোচনা করবো ছাদে মিষ্টি তেঁতুলের চাষ পদ্ধতি নিয়ে সবাই মনোযোগ দিয়ে পুরো আর্টিকেল টি পড়ুন।
থাই মিষ্টি তেতুল (Thai Sweet Tamarind ): দ্রুত বাড়ছে মানুষ বাড়ছে বড় বড় দালান কোঠা ।দিন দিন ভরে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত বা ফলের বাগান করার জায়গাগুলি । এক টুকরা জায়গাও আর ফাকা থাকছে না গাছ লাগানোর জন্য । এ ক্ষেত্রে বাড়ির ছাদ কিংবা বেলকনিই একমাত্র ভরসা । শহরের মানুষের জন্য ছাদে বাগানের কোন বিকল্প নেই । গাছ ভালবাসে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না । কিন্তু অনেক সময় ইচ্ছা থাকার পরও জায়গার অভাবে গাছ লাগানো সম্ভব হয়ে উঠে না ।
তবে সদিচ্ছা থাকলে একটুকরা ছাদ কিংবা একটু বেলকনিতেও দু চারটা ফলের গাছ বা কয়েকটা শাকসব্জির গাছ লাগিয়ে একদিকে যেমন শখ মিটানো যায় তেমনি কিছু টাটকা শাকসব্জি খাওয়া যায় । আর ছাদে যে শুধু কিছু শাক সবজি , লেবু , পেয়ারা জাতীয় কিছু ফল হচ্ছে তা কিন্তু নয় । বর্তমানে ছাদে দেশী ফলের পাশাপাশি বেশ কিছু বিদেশী ফলও বেশ সুনাম অর্জন করেছে । তন্মধ্যে থাই মিষ্টি তেতুল (Thai Sweet Tamarind ), থাই মিষ্টি কামরাংগা ( Thai Sweet Star Fruits ), থাই জাম্বুরা ( Thai Grape Fruits ) , থাই পেয়ারা ( Thai Guava ), রাম্বুটান ( Rambutan ) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক গাছ চিনা সম্ভব হয় না বলে ঠকতে হয় । আজ আমি প্রথমে থাই মিষ্টি তেতুল নিয়ে কয়েকটি কথা লেখব বলে আশা করছি।
অরিজিন্যাল থাই মিষ্টি তেতুলের কলমের চারা পাওয়া খুব দুষ্কর । আর পাওয়া গেলেও তা মিষ্টি তেতুল কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে । আবার নার্সারীগুলোতে মিষ্টি তেতুলের বীজের চারা পাওয়া যায় প্রচুর। কিন্তু টবে তেতুলের বীজের চারা লাগালে তা থেকে কতটুকু ভাল ফল পাওয়া যাবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমি আমার ছাদে বাগানের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি এ থেকে কখনও ভাল ফল পাওয়া যায় না। ঐ বীজের চারা যদি মিষ্টি তেতুলের বীজ থেকেও হয় তবুও সেই গাছের ফল মিষ্টি হবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
থাই মিষ্টি তেতুলের (Thai Sweet Tamarind ) ফুল থেকে শুরু করে ফল পাকা পর্যন্ত মোট প্রায় সাত মাস সময় নিয়ে থাকে এবং একবার গাছে ফল থাকা অবস্থাতেই পুনরায় ফুল আসে । সে হিসেবে বছরে মোট দুইবার ফল পাওয়া যায় । একবার বর্ষাকালে এবং আরেকবার শীতকালে । ছাদে এর চাষের জন্য বাড়তি কোন যত্নের প্রয়োজন হয় না । অন্যান্য টবের গাছের মত সাধারণ যত্ন নিলেই ভাল ফল পাওয়া যায়।
কিভাবে থাই তেতুলের গাছ লাগাবেনঃ
দুইভাগ দো-আঁশ / বেলে দো-আঁশ মাটির সংগে এক ভাগ গোবর, ১০০ গ্রাম টি, এস, পি, ১০০ গ্রাম পটাশ, ২৫০ গ্রাম হাড়ের গুড়া এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খৈল একত্রে মিশিয়ে একটি কমপক্ষে ২০ ইঞ্চি বড় টব বা হাফ ড্রামে পানি মিশিয়ে রেখে দিন । ১০-১২ দিন পর মাটি খুচিয়ে রেখ দিন আর্ও ৪-৫ দিন । তারপর একটি ভাল কলমের চারা উক্ত টবে লাগান । তবে চারাটি অবশ্যই কলমের ( Grafting ) কিনা এবং থাই মিষ্টি তেতুলের ( Thai Sweet Tamarind ) কিনা তা নিশ্চিত হয়ে লাগাবেন ।
বীজের চারা টবে লাগিয়ে অযথা দুই-তিন বছর সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই লাভ হবে না । যদিওবা বীজের চারাতে ফল আসে সেই ফল পুষ্ট হবে না এবং মিষ্টি তেতুলের গুণাগুণ পাওয়া যায় না । পরিচর্যাঃ থাই মিষ্টি তেতুলের চারা গাছ লাগানোর পর প্রথম ছয় মাস তেমন কোন যত্ন নিতে হবে না । পরিমিত পানি এবং আগাছা পরিষ্কার করলেই চলবে । ছয় মাস পর থেকে প্রতিমাস অন্তর অন্তর সরিষার খৈল মিশ্রিত পচা পানি দিতে হবে । খৈল এর পানি দেওয়ার পূর্বে মাটি খুচিয়ে নিলে ভাল হয় ।
রোগজীবাণু ও পোকামাকড়ঃ
থাই মিষ্টি তেতুলে সাধারণতঃ পোকামাকড় আক্রমন করে না । তবে বর্ষাকালে তেতুল ফলে ছত্রাক আক্রান্ত করতে দেখা যায় । তাতে তেতুল ফল ফেটে যাবার আশংকা থাকে । কাজেই বর্ষাকাল আসার আগেই যদি ১০ দিন অন্তর অন্তর কয়েকবার একটি ভাল ছত্রাক নাশক ঔষধ স্প্রে করা যায় তাহলে এই সমস্যা থাকে না ।