আজ শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন

কুইক কম্পোস্ট ও বোঁর্দো মিক্সচার প্রস্তুত প্রণালী

কুইক কম্পোস্ট ও বোঁর্দো মিক্সচার প্রস্তুত প্রণালী

কুইক কম্পোস্ট ও বোঁর্দো মিক্সচার প্রস্তুত প্রণালী

কুইক কম্পোস্ট:

কুইক কম্পোস্ট অল্প সময়ে অর্থাৎ মাত্র ১৫ দিনে তৈরী ও ব্যবহার উপযোগী উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন একটি জৈব সার।

কুইক কম্পোস্ট তৈরীর উপাদান – সরিষার খৈল, কাঠের গুঁড়া বা চাউলের কুঁড়া ও অর্ধপঁচা (ডিকম্পোজড) গোবর বা হাঁস মুরগরি বিষ্ঠা যার অনুপাত হবে ১ : ২ : ৪ অর্থাৎ একভাগ খৈল + দুইভাগ কাঠের/চাউলের কুঁড়া + চারভাগ গোবর/হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা।

কুইক কম্পোস্ট তৈরী পদ্ধতিঃ

১। গুঁড়া করা সরিষার খৈল, চাউলের কুঁড়া / কাঠের গুঁড়া ও ডিকম্পোজড গোবর ভালভাবে মিশাতে হবে।
২। মিশ্রনে পরিমান মত পানি যোগ করে এমনভাবে কাই বানাতে হবে যাতে ঐ মিশ্রণ দিযে কম্পোস্ট বল তৈরি করলে ভেঙ্গে যাবেনা কিন্তু ১ মিটার উপর থেকে ছেড়ে দিলে তা ভেঙ্গে যাবে।
৩। মিশ্রিত পদার্থগুলো স্তুপ করে এমন ভাবে রেখে দিতে হবে যাতে ভিতরে জলীয় বাষ্প বের হতে না পারে আর এ কারণে পচনক্রিয়া সহজতর হয়। স্তুপটির পরিমান ৩০০- ৪০০ কেজির মধ্যে হওয়া ভাল। স্তুপের সমসত্ম উপাদান একবারে না মিশিয়ে ৩/ ৪ বারে মিশাতে হবে।

৪। শীতকালে স্তুপের উপরে ও চারদিকে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আর বর্ষাকালে বৃষ্টির জন্য পলিথিন সীট ব্যবহার করতে হবে এবং বৃষ্টি থেমে গেলে পলিথিন সরিয়ে ফেলতে হবে।

৫। স্তুপ তৈরীর ২৪ ঘন্টা পর থেকে স্তুপের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে ৬০-৭০ সেঃ তাপমাত্রায় পৌছায়। অর্থাৎ স্তুপে তখন আঙ্গুল ঢোকালে অসহনীয় তাপমাত্রা অনুভূত হবে (৬০-৭০ সেঃ)। যার ফলে সৃষ্ট তাপে মিশ্রিত পদার্থ পুড়ে নষ্ট হতে পারে। তাই স্তুপ ভেঙ্গে উলট – পালট করে ১ ঘন্টা সময়ের জন্য মিশ্রনকে ঠান্ডা করে নিতে হবে এবং পুনরায় পূর্বের ন্যায় স্তুপ করে রাখতে হবে।

৬। এভাবে ৪৮-৭২ ঘন্টা পর পর স্তুপ ভেঙ্গে উলট- পালট করতে থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে উক্ত উন্নত মিশ্র জৈব সার জমিতে প্রয়োগের উপযোগী হবে। সার তৈরী হলে তা ঝুরঝুরে শুকনা হবে এবং কালো বাদামী বর্ণের হবে।

আরও পড়ুন   ভুট্টার জাবপোকা বা এফিড দমনে করণীয়

প্রয়োগমাত্রাঃ

১। জমির উর্বরতা ও ফসলভেদে প্রতি শতাংশে প্রায় ৬-১০ কেজি কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে হয়। ফসলের জমি তৈরীর সময়ে প্রতি শতাংশে ৬ কেজি এবং ধান চাষের ক্ষেত্রে কুশি পর্যায়ে সেচের পূর্বে ২ কেজি করে উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

২। সবজী ফসলের ক্ষেত্রে জমি তৈরীর সময়ে প্রতি শতাংশে ৬ কেজি এবং ৪ কেজি সার রিং বা নালা করে সব্জী বেডে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হয়।

পুষ্টিমান ও ব্যবহারের উপকারীতাঃ

কুইক কম্পোস্ট সারে নাইট্রোজেন – ২.৫৬%, ফসফরাস -০.৯৮%, ও পটাশিয়াম- ০.৭৫% পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কিছু গৌণ খাদ্য উপাদান থাকে। ( ঢা.বি. ল্যাব ১৯৯৯)

কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়, অনুজীবের ক্রিয়া বাড়তে থাকে, ফসলের প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান সহজ লভ্য হয়। ফলে আশানরূপ ফলন পাওয়া যায় এবং গুনগত মান সম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়।

 

বোঁর্দো মিক্সচার:

বোঁর্দো মিক্সচারের উদ্ভব হয়েছিল ১৮৮৫ সনে ফ্রান্সে। তবে এখনো বালাইনাশক হিসেবে এরজনপ্রিয়তা রয়েছে। উদ্ভিদের বিভিন্ন ছত্রাকজনিত রোগের পাশাপাশি ব্যাটেরিয়াজনিত রোগেও এটিব্যবহৃত হয়েথাকে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

১. তুঁতে ২. চুন, ৩. পানি, ৪. দুইটি ছোট ও একটি বড় মাটির পাত্র, ৫. দুইটি বাঁশ/কাঠের কাঠি, ৬.সেপ্রয়ার, ৭.একটি ইস্পাতের চাকু।

প্রস্তুত প্রণালী:

তুঁতে ও চুন আলাদা করে মিহিভাবে গুড়া করে নিয়ে ৮০ গ্রাম করে মেপে নিতে হবে। ছোট মাটিরপাত্রেদু’টিতে ৫ লি. করে পানি নিতে হবে। প্রতিটি পাত্রে গুড়াকৃত তুঁতে ও চুন ঢেলে বাঁশের কাঠি দিয়েনেড়ে৮-১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর দু’পাত্রের দ্রবণ বড় মাটির পাত্রে একসাথে ঢেলেদিয়েভালভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। এটিই বোঁর্দো মিঙচার। মিঙচারের রঙ গাঢ় নীল হলে মিশ্রণসঠিকহয়েছে বুঝতে হবে। সবুজ রঙ বা সাদাটে রঙের হলে বুঝতে হবে যথাক্রমে তুঁতে বা চুন বেশিহয়েছে। প্রস্তুতকৃত বোঁর্দো মিশ্রণটি ইস্পাতের (stainlesssteel) এর চাকুর অগ্রভাগ ডুবিয়ে দেখতেহবেলালচে দাগ পড়ে কিনা। না পড়লে বুঝতে হবে মিশ্রণটি তৈরি ঠিকমতো হয়েছে। তবে লালচেদাগপড়লে ধীরে ধীরে সামান্য পরিমানে চুনের পানি যোগ করে আবার পরীৰা করে দেখতে হবে।মিশ্রণটিসেপ্রয়ার মেশিনে করে ব্যবহার করতে হবে। তৈরিকৃত বোঁর্দো মিশ্রণ ২-৩ ঘন্টার ভেতর ব্যবহারকরতেহয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web