আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন

অপরাজিতা ফুলের ভেষজ গুন

অপরাজিতা ফুলের ভেষজ গুন

লাল, নীল, সাদা, বেগুনি, গোলাপি এমনি আরো কত রঙে রঙিন আমাদের পুষ্প-নিসর্গ! এর মধ্যে নীল ফুলের কথা বললে প্রথমেই আসে রূপসী অপরাজিতার নাম। লতানো গাছে সবুজ পাতার কোলে এক টুকরো প্রগাঢ় নীলের সম্ভাষণ ভালোলাগার অনুভূতিকে নিমেষে ছুঁয়ে যায়। ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবু রঙের বাহার আর মিষ্টি শোভায় অনন্য সে অপরাজিতা।

অপরাজিতা ফুলটি চড়ঢ়রষরড়হধপবধব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত যার ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই পি। গাঢ় নীল ফুলটিকে ডাকা হয় নীলকণ্ঠ নামেও। নীল ছাড়াও চোখে পড়ে সাদা এবং হালকা বেগুনি রঙের ফুল। ফুলের ভেতরের দিকটা সাদা বা ঈষৎ হলুদ রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত গাছের ডাল বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে মাটিতে রোপণ করতে হয়, ছোট ছোট ধূসর ও কালো বর্ণের বিচি রোদে শুকিয়ে নরম মাটিতে রোপণ করতে হয়। বাড়ির আঙিনায়, টবে বা বাগানেও এ গাছ লাগানো হয়। আশপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি তরতর করে বেড়ে ওঠে, ফুলে-পাতায় বিকশিত হয়। হালকা সবুজ রঙের পাতার গড়ন উপবৃত্তাকার। ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।আমাদের দেশে নীল, সাদা ও কদাচিৎ বেগুনি-রঙের অপরাজিতা ফুল দেখা যায়। লতাজাতীয় গাছে এক পাপড়ি ও দুই স্তর পাপড়িতে এই ফুল হয়। পাশ্চাত্য উদ্ভিদবিদরা বলেন, এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। খুব প্রাচীনকালে এই দ্বীপ এশিয়াসহ অস্ট্রেলিয়া মিলে একটি মহাদেশে ছিল। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনিপুষ্প। ফুলের ভিতরের আকৃতি দেখে এই নাম। কেরালায় একে বলে ‘শঙ্খপুষ্পী’। এই ফুলের বয়স অন্তত পাঁচ কোটি বছর। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকায় রমনা পার্ক, শিশু একাডেমির বাগান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, বলধা গার্ডেন ও কোনো কোনো অফিসের বাগানে এই ফুলের গাছ আছে।

আরও পড়ুন   পেঁপে ফুল নিয়ন্ত্রণ করবে আপনার ডায়াবেটিস!

নীল রঙের ফুল আমাদের দেশে ও বিশ্বে লাল, সাদা, গোলাপি, গাঢ় লাল ইত্যাদি ফুল থেকে কম। পৃথিবীর বিবর্তনের ধারায় নীল রং এসেছে সবার শেষে। আমরা এর নীল রঙের বৈভবে মুগ্ধ কিন্তু অপরাজিতা নামটিও সুপ্রাচীন ও মাধুর্যে অজেয় বা অদ্বিতীয়া। অপরাজিতা কেবল সৌন্দর্যে নয়, ঔষধি গুণেও অতুলনীয়। এর ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার্য। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অপরাজিতা পবিত্র উদ্ভিদ। শারদীয় দুর্গোৎসবে ষষ্ঠীতে এবং বিজয়া দশমীর পুজোয় এ ফুল ব্যবহারের প্রচলন আছে। রূপকথার গল্পেও আছে অপরাজিতার নাম, পরীদের কাছে আংটি হিসেবে ছিল ফুলটির ব্যবহার। মূর্ছায়, শূল ব্যথায়, ভূতের ভয়ে উন্মাদে, গলগ-ে, ঘন ঘন প্রস্রাবে, মেধা বৃদ্ধিতে, স্বরভঙ্গে, শুকনো কাশিতে, আধকপালে বেদনায়, খোস-পাঁচড়ায়, মেহে ও শোথে অপরাজিতার মূল, পাতা বা ডাল ওষুধের কাজ করে। কবিরাজরা এটা জানেন।
নীল অপরাজিতা বারো মাস ফোটে। তবে শীতে কমে যায়। নীল ফুলের গাছ যত তাড়াতাড়ি শাখা-প্রশাখা ছড়ায় সাদা তত তাড়াতাড়ি নয়। অপরাজিতা ফুল গুচ্ছে ফোটে না। পাতাভর্তি লতার ফাঁকে ফাঁকে এক একটি ফুল ফোটে, যেন এরা একা থাকতে ভালোবাসে। আর তাতে আপনার ভাবুক মন আনমনে গেয়ে উঠতে পারে নজরুলের গান:

অপরাজিতা ফুলের ভেষজ গুন

অপরাজিতা ফুলটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি ফুল। অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই ফুলটি সাধারণত বর্ষাকালে হয়ে থাকে। এটি অনেক লম্বা ও লতানো একটি গাছ। ফুলটি দুটি রঙের হয়ে থাকে, সাদা ও নীল। অপরাজিতার ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানান ঔষধি গুনাগুণ সম্পন্ন।

  • মূর্ছা যাওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হিস্টেরিয়া বলে। কোন ব্যক্তির হিস্টেরিয়া আক্রমনের সময়, অপরাজিতা ফুলের গাছ ও পাতা থেঁতে ছেঁকে ১ চা চামচ রস রোগীকে খাওয়ালে রোগী স্বাভাবিক হয়ে যায়।

  • অপরাজিতার মূলের সাথে ৫/৬ গ্রাম পরিমাণ ঘি মিশিয়ে শিলে পিষে অল্প মধু দিয়ে সকাল বিকাল টানা ৭ দিন খেলে, গলগন্ড রোগ ভাল হয়ে যায়।

  • শরীরের কোন স্থান ফুলে গেলে, ওই স্থানে নীল  অপরাজিতার পাতা, মূল সহ বেটে অল্প গরম করে লাগালে, ফুলাভাব কমে যায়। ফুলাভাব না কমা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখতে হবে।

  • শিশু অথবা বয়ষ্ক যারা ঘন ঘন প্রস্রাব করে এই ক্ষেত্রে সাদা বা নীল অপরাজিতা গাছের মূল  সহ রস করে এক চা চামচ প্রত্যেকদিন ২ বার একটু সামান্য দুধ মিশিয়ে সকাল বিকাল এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

  • ঠাণ্ডাজনিত কারনে গলার স্বর ভেঙ্গে গেলে, অপরাজিত গাছের লতানো পাতা ১০ গ্রাম পরিমানে নিয়ে ৪/৫ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধর পানি ১ কাপ থাকা অবস্থায় নামিয়ে ছেঁকে, ৪/৫ দিন ৩/৪ বার ১৫ মিনিট গারগেল করলে স্বর ভালো হয়ে যায়।

  • অপরাজিতা মূলের রস ১ চা চামচ আধা কাপ অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে, সেই পানি ১০/১৫ মিনিট মুখে রেখে ৭ দিনে ৩বার গারগেল করলে শুষ্ক কাশি ভালো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মিশ্রণটি খাওয়া যাবে না।

  • এক টুকরা মূল ও গাছ থেঁতলে তার রস হাতের তালুতে নিয়ে নাক দিয়ে টেনে দিনে দু’তিন বার নস্যি নিলে মাথা ব্যাথা সেরে যায়।

আরও পড়ুন   সফল কৃষাণী শিউলি

 

 

 

 

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web