আজ শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

জেনে নিন ১২ মাসের কৃষি

জেনে নিন ১২ মাসের কৃষি

পরিবর্তিত জলবায়ুতে বারো মাসের কৃষি

বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে):

১) এ মাসে খরা হতে পারে এবং বোরো ধানের জন্য খুবই নাজুক সময়। নাবি বোরো ধানের থোড় আসার সময় যাতে খরার জন্য পানির অভাব না হয় তার জন্য আগে থেকেই সেচের ব্যবস্থা রাখা।
২) ধান গাছে এসময়ে ফুল আসে এবং বাদামী গাছ ফড়িং এর ব্যাপক আক্রমন হয়। যার ফলে ধান চিটা হয়ে যায়। আক্রান্ত জমির পানি ৭-৮ দিনের জন্য সরিয়ে দিলে পোকার বংশ বৃদ্ধি হ্রাস পায়। মাঝারী কুশি গজানো অবস্থায় জমিতে ধানের প্রতি গোছায় যদি ২-৪টি গর্ভবতী স্ত্রী ফড়িং অথবা শতকরা ৫০টি গাছে ১০টি বাচ্চা পোকা পাওয়া যায় তাহলে গাছের গোড়ায় সঠিক কীটনাশক প্রয়োগ করে বাদামী গাছ ফড়িং দমন করা যায়।
৩) আগাম বন্যার আগেই জলি আমন ধানের বীজতলা তৈরি করতে হবে যাতে বোরো ধান কাটার পরপরই জলি আমন চারা রোপণ করা যায়।
৪) বর্ষার সময় জলি আমন ধানকে কচুরিপানার কবল থেকে রক্ষা করার জন্য এ মাসেই জমির আইলে ধৈঞ্চা চাষ করে প্রাকৃতিক বেড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৫) বাছাইকৃত এবং সংরক্ষিত বীজের গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্রে বীজ রাখা যেতে পারে।
৬) বন্যা প্রবণ নিচু এলাকা পানিতে আগে ডুবে যায়। এজন্যে এসব এলাকায় আগাম জাতের আউশ/পাট চাষ করতে হবে যাতে বন্যার পানি আসার আগেই ফসল ঘরে তোলা যায়।
৭) বন্যার পানির সাথে সাথে বেড়ে উঠার মত জলি আমন ধান (যেমন-ফুলকরি, বাদাল) চাষ করা ।
৮) খড়-কুটা, পাতা, আগাছা, কচুরিপানা দ্বারা মাটির উপরের স্তরে মালচিং দিলে মাটির রস মজুদ থাকে। মাটির উপরের স্তর ভেঙ্গে মালচিং করলে জমির রস সংরক্ষণ করা যায়।

৯) গম ও ভুট্টা কাটা হয়ে গেলে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ শুকানো, উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন, বায়ুরোধী করে সংরক্ষণ, বীজপাত্রকে মাটি থেকে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
১০) খরিফ ভুট্টার বয়স ২০-২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে।
১১) ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এর মহাবিপদ সংকেত পাওয়ার পর বীজের পাত্র নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
১২) বোর ধানে সঠিকমাত্রায় সেচ দিয়ে পানির অপচয় রোধ করতে হবে।
১৩) এ মাসে শিলাবৃষ্টি হতে পারে, বোরো ধান ৮০% পাকলে তাড়াতড়ি কেটে ফেলুন।
১৪) উফশী জাতের আউশ ধানের চারা রোপন করতে হবে।
১৫) সম্পূরক সেচের জন্য ক্ষেতের/ মাঠের এক কোনে মিনি পুকুর খনন করুন।
১৬) হলুদ রোপন করুন।
১৭) নাবী জাতের পাট চাষ করুন।
১৮) আগে থেকেই সেচের ব্যবস্থা করে রাখুন।
১৯) মাসের শেষ সপ্তাহে নাবী উফশী জাতের আউশ ধান রোপন/ বপন করুন।

 

জ্যৈষ্ঠ (মধ্য মে থেকে মধ্য জুন):

১) বোরো ধান কাটার সপ্তাহখানেক আগে বোনা আমন ধানের বীজ ছিটিয়ে দিলে অথবা বোরো ধান কেটি সাথে সাথে আমন ধানের চারা রোপণ করলে বন্যার পানির আগেই চারা সতেজ হয়ে উঠবে। জলি আমন ধান আশ্বিন- কার্তিক মাসে কাটা যায় এবং ফলনও ভাল হয়।
২) আউশ ও বোনা আমন ধানে পামরী পোকার আক্রমন হলে জমিতে জাল টেনে পোকা মেওে ফেলতে হবে। ধানের প্রতি গোছায় যদি ৪টি পূর্ণ বয়ষ্ক পামরী পোকা বা প্রতি পাতায় ১৫টি কীড়া (মাঝারি কুশি গজানো অবস্থায়) অথবা শতকরা ৩৫টি পাতা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয় তাহলে অবিলম্বে সঠিক কীটনাশক ছিটিয়ে পোকা দমন করতে হবে।
৩) বন্যার কারণে উঁচু জায়গায় রোপা আমন, সবজি ও অন্যান্য ফসলের বীজতলা তৈরি করতে হবে যাতে সূর্যের আলো নিয়মিত পড়ে।
৪) বন্যাকালীন সময়ে চারা নষ্ট হয় বলে অধিক পরিমাণ চারা উৎপাদন করা যেতে পারে।
৫) এ মাসে খরা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে আউশ ধান ও পাটের জমিতে সম্পূরক সেচ দিতে হবে।
৬) বাছাইকৃত এবং সংরক্ষিত বীজের গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্রে বীজ রাখা যেতে পারে।
৭) জমির ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলা উচিৎ। তাছাড়া হঠাৎ ঝড় বা শিলা বৃষ্টির কারণে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
৮) রোপা আমনের সাথে খরা সহনশীল ফলের (যেমন-কুল) বাগান করে অধিক লাভবান হতে পারেন।
৯) খরাপ্রবণ এলাকায় রোপা আমন ধান ক্ষেতে মিনি পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০) মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সম্পূরক সেচের জন্য ক্ষেতের/ মাঠের এক কোনে মিনি পুকুর খনন করুন।
১১) মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নাবী জাতের পাট চাষ করুন।
১২) নাবী উফশী জাতের আউশ ধান রোপন/ বপন করুন।

 

আষাঢ় (মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই):

১/বন্যার পানিতে ডুবে যায় না এবং প্রচুর আলো বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে উফশী আমন ধানের বীজতলা তৈরী এবং এর যত্ন নিতে হবে।
২/অস্বাভবিক বন্যার ফলে অনেক সময় সরাসরি পাট গাছ থেকে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পাটের ডগা বা কান্ড কেটে বাড়ির আঙ্গিনায় বা কোন উঁচু জায়গায় লাগিয়ে তা থেকে বীজ উৎপাদন করা যায়। আষাঢ় মাসে পাটের কান্ড বা ডগা কেটে লাগানোর উপযুক্ত সময়।
৩/ এ সময়ে পাটের চেলে পোকা, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা, ক্ষুদে মাকড়সার আক্রমন এবং পাতা হলদে রোগের প্রার্দভাব দেখা দিতে পারে। রোগ এবং পোকার আক্রমনে সটিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪/ বন্যার কারণে উঁচু জায়গায় রোপা আমন, সবজি ও অন্যান্য ফসলের বীজতলা তৈরি করতে হবে।
৫/ বীজ ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণ বন্যামুক্ত স্থানে বা মাচা বেধে উঁচু স্থানে সংরক্ষণ করুন।
৬/ বন্যার কারণে রোপা আমনের বীজতলা তৈরির মত জায়গা না থাকলে ভাসমান বীজতলায় চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। তাছাড়া দাপগ পদ্ধতিতেও বীজতলায় চারা উৎপাদন করা যায়।
৭/ আগাম বন্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকলে আউশ ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলেই কাটতে হবে।
৮/ অস্বাভাবিক বন্যা হলে এ মাসেই পাটের ডগা ১৪-২২ সেমি: কেটে উঁচ স্থানে কাদাময় বীজতলায় লাগিয়ে দিতে হবে। এভাবে পরবর্তী বছরের পাটের বীজের চাহিদা মিটানো সম্ভব।
৯/ আষাঢ় মাসে প্রথম দিকে অর্থাৎ বন্যা আসার আগেই চর এলাকায় পিট্ তৈরি করে রাখতে হয়। বন্যার পানি সরে গেলে উপরের জমে থাকা বালি সরিয়ে এতে সবজি বীজ কিংবা চারা লাগানো যায়।

আরও পড়ুন   ভূমিহীনদের পথের দিশা তিস্তাচরের মিষ্টি কুমড়া

১০/ অনেক সময় এ মাসের প্রথম দিকে অনাবৃষ্টি অথবা আগাম বন্যা হতে পারে। যথাসময়ে চারা রোপণের জন্য সবাই মিলে উপযুক্ত স্থানে আমনের “কমিউনিটি বীজতলা” তৈরি করা যেতে পারে।
১১/ রোপা আমন ধানের জমি সমান করে তৈরি ও আইল মেরামত করা জরুরি, যাতে বৃষ্টি বা সেচের পানির যথাযথ ব্যবহার হয়।
১২/ নাবি রোপা আমনের পরিবর্তে যথা সম্ভব আগাম রোপা আমনের ( ব্রিধান ৩৩,ব্রিধান-৩৯) চাষ করা উচিৎ যাতে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যে ফসল কাটা যায় ফলে খরায় ফসলের কম ক্ষতি হবে।
১৩/ জমির এক কোনে মিনি পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সম্পূরক সেচ নিশ্চিত করতে হবে।
১৪/ বন্যাপ্রবণ এলাকায় প্রধান জমিতে বন্যার পানি থাকলে বলান (Double transplanting) পদ্ধতিতে ধান আবাদ করা যেতে পারে।
১৫/ উঁচু বা নিরাপদ স্থানে বীজ সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
১৬/ জমি ভেদে উপযুক্ত জাত নির্বাচন বা বন্যার পানি সহনশীল বিকল্প ফসল (যেমন-লতিরাজ কচু) চাষ করা যেতে পারে।
১৭/ বন্যার পূর্বে তোলা যায় এমন ফসল (যেমন-আলু, ভুট্টা, আলু ও ভুট্টার আন্তঃরিলে ফসল, চীনা বাদাম, দ্রুত বর্ধনশীল শাক সবজি, গ্রীষ্মকালীন মুগডাল ইত্যাদি) এর চাষ করা যেতে পারে।
১৮/ উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের ভেড়িবাধে গিমা কলমি ও অন্যান্য ফসল আবাদ করা যেতে পারে।
১৯/ সবজি ক্ষেতে পানি জমে গেলে তা সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০/বন্যা প্রবন এলাকায় ভাসমান/ দাপগ বীজতলায় আমন ধান, অন্যান্য চারা উৎপাদন করুন।
২১/ আম, আপেল কুল, বাউ কুলসহ বিভিন্ন ফলের চারা রোপন করুন।

 

শ্রাবন (মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট):

১/ পাট পচানোর উপযুক্ত সময় এই মাস। পানির স্বল্পতা থাকলে রিবন রেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
২/ রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলে আগাম শীত আসে, তাই এসব অঞ্চলে শ্রাবন থেকে ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তুলা বীজ বপন করতে হবে। অন্যান্য এলাকায় শ্রাবনের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত তুলা চাষ করা যায়।
৩/ উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে উপযোগী উফশী জাতের রোপা আমন আবাদ করা যেতে পারে।
৪/ রোপা আমন ধানের জমি সমান ও আইল মেরামত করে বৃষ্টি বা সেচের পানি সদ্ব্যবহার করুন।
৫/ নাবি রোপা আমনের পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমনের চাষ করা উচিৎ যাতে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যে ফসল কেটে নেয়া যায়, এর ফলে খরায় ফসলের কম ক্ষতি হবে।
৬/ জমির এক কোণে গর্ত করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৭/ বন্যার সময় শুকনো জায়গার অভাবে টব, মাটির চাঢ়ি, কাঠের বাক্স, পুরাতন কেরোসিনের টিন, ড্রাম এমনকি পলিথিন ব্যাগে সবজির চারা উৎপাদন করা যায়।
৮/ বীজ ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণ বন্যামুক্ত স্থানে বা মাচায় বা যেকোন উঁচু স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
৯/ বন্যার পানি নামতে দেরি হলে কচুরিপানার ভাসমান স্তুপের উপর কিছু মাটি দিয়ে লাউয়ের বীজ বোনা যায়। পানি চলে গেলে স্তুপটি যথাস্থানে বসিয়ে মাচা দিতে হবে। এভাবে সময় মতো লাউ উৎপাদন করা যায় এবং শিমও চাষ করা যায়। মূলা বীজও লাগানো যায়।
১০/ বৃষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালীন সবজির গোড়ায় পানি জমে থাকলে নিকাশের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং গোড়ার মাটি উঁচু করে দিতে হবে।

১১/ বন্যায় ক্ষতি হলে মাসের শেষ সপ্তাহে নাবী জাতের বিআর ২২, ২৩, ৩৮ ব্রি ধান ৪৬, বিনাশাইল, নাইজারশাইল জাতের আমন ধানের বীজ বপন করুন।
১২/ আম, আপেল কুল, বাউ কুলসহ বিভিন্ন ফলের চারা রোপন করুন।
১৩/ মাসের শেষ সপ্তাহে মাসকালাইয়ের বীজ বপন করুন।

 

ভাদ্র (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর):

১/ পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যাকবলিত স্থানে নাবি আমন ধান, যেমন-বিআর ২২, বিআর ২৩ ও বিনাশাইল লাগাতে হবে।
২/ এ সময় বীজের জন্য তোষা পাটের বীজ বুনতে হবে। বন্যায় তোষাপাটের বেশি ক্ষতি হয়।
৩/ বন্যার পানি নামতে দেরি হলে কচুরিপানার ভাসমান স্তুপের উপর কিছু মাটি দিয়ে লাউয়ের বীজ বোনা যায়। পানি নেমে গেলে স্তুপটি যথাস্থানে বসিয়ে মাচা দিতে হবে। এভাবে সময়মতো লাউ উৎপাদন করা যায়। এ নিয়মে শিমও চাষ করা যায়।
৪/ লাউ, শিমের রোপণ ও পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। পচা কচুরীপানার স্তুপে বীজ বপন করে পরবর্তীতে মূল মাদায় স্থানান্তর করা যায়।
৫/ বন্যায় ক্ষতি হলে নাবী জাতের বিআর ২২, ২৩, ৩৮ ব্রি ধান ৪৬, বিনাশাইল, নাইজারশাইল জাতের আমন ধানের বীজ বপন করুন।
৬/ আম, আপেল কুল, বাউ কুলসহ বিভিন্ন ফলের চারা রোপন করুন।
৭/ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টবে, বাক্সে, পলিব্যাগে, ড্রামে শাক-সবজির চারা উৎপাদন করুন।
৮/ মাসকালাইয়ের বীজ বপন করুন।
৯/ বেগুন, সীম, লাউ, গীমা কলমী, মরিচ চাষ করুন।
১০/ খরা কবলিত রোপা আমন ধানে ফিতা পাইপ ব্যবহার করে সম্পূরক সেচ দিন।

আরও পড়ুন   সাপাহারে আমের চারা রোপনের হিড়িক

 

আশ্বিন (মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর):

 

১/ এসময় খরা দেখা দিতে পারে। সে জন্য আমন ধানের জমিতে সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
২/ আমন চাষের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নাবি জাতের বিআর ২২ ও বিআর ২৩ লাগানো যেতে পারে। এছাড়া নাইজারশাইল বা লতিশাইল মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত লাগানো যায়।
৩/ বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন যেসব জমিতে উফশী বোরো ধানের চাষ করা হয়, সেসব জমিতে স্বল্প মেয়াদি টরি ৭ ও কল্যাণী জাতের সরিষা, ভূট্টার বীজ, লালশাক, পালংশাক ও ডাটাশাক প্রভৃতি বিনা চাষে বপনের জন্য বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
৪/ কার্তিক মাসে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বিনা চাষে রোপণের জন্য আলু বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।
৫/ উঁচু স্থানে, পলি ব্যাগ/ বীজতলা পদ্ধতিতে আখের চারা উৎপাদন করুন।
৬/ বিনা চাষে গম, সরিষা, মাসকলাই, খেসারী , মুগ তিল, তিষি, যব ইত্যাদি বপন করুন ।
৭/ পানির অপচয় রোধ ও সহজে চলাচলের জন্য সঠিকভাবে সেচ নালা তৈরি ও যথাসময়ে মেরামত করা প্রয়োজন।
৮/ খরা কবলিত রোপা আমন ধানে সম্পূরক সেচের জন্য পিভিসি ও ফিতা পাইপ সংগ্রহ/ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯/ মাদায় মিষ্টি কুমড়া ও লাউয়ের বীজ বপন করুন।
১০/ বেগুন, সীম, লাউ, গীমা কলমী, মরিচ চাষ করুন।
১১/ আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করুন।

 

কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর):

 

১/ এমাসে ঘূর্ণিঝড়, তুফান ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও প্রস্তুতি রাখতে হবে।
২/ এ মাসে হঠাৎ বৃষ্টিতে রোপণকৃত শাকসবজির চারা নষ্ট হতে পারে। শাকসবজি রক্ষার জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩/ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে বিনা চাষে টরি-৭, বারি ৯ ও কল্যানিয়া সরিষা, মশুর, খেসারী, পানি কচু বপন/ রোপন করুন
৪/ খরা সহনশীল ছোলা, মুগ, তিল, তিষি, যব ইত্যাদি বপন করুন।
৫/ মাদায় মিষ্টি কুমড়া ও লাউয়ের বীজ বপন করুন।
৬/ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে বিনা চাষে মালচিং দিয়ে আলু আবাদ করুন।
৭/ মাটিতে জো আসার সাথে সাথে শীতকালীন শাক-সবাজী ও বোরো ধানের বীজ বপন করুন।
৮/ চীনাবাদামের বীজ বপন করুন।
৯/ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত খরা কবলিত রোপা আমন ধানে ফিতা পাইপ ব্যবহার করে সম্পূরক সেচ দিন।
১০/ মাসের শেষ সপ্তাহে গম বীজ বপন করুন।
১১/ আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করুন।
১২/ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত উঁচু স্থানে, পলিব্যাগে অথবা বেডে আখের চারা উত্তোলন করুন।
১৩/ ভুট্টা বীজ বপন করুন।
১৪/ সেচ নালা সংষ্কার ও মেরামত করুন।

 

অগ্রহায়ন (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর):

১/ খরা উপযোগী ফসল যেমন সরগম, মিলেট, কাউন, বার্লি এবং গভীর শিকড়যুক্ত ফসলের চাষ করতে হবে।
২/ আমন ধান কাটার পরপরই জমি চাষ দিয়ে রাখতে হবে, এতে বাস্পীভবনের মাধ্যমে মাটির রস কম শুকাবে।
৩/ উপকূলীয় অঞ্চলে রোপা আমন কাটার আগে রিলে খেসারি আবাদ করা যেতে পারে।
৪/ এমাসে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে, প্রয়োজনে আমন ধান ৮০% পাকলে কাটা যেতে পারে।
৫/ উপকূলীয় অঞ্চলে শীতকালীন শাকসবজি আলু, মিষ্টিআলু, তরমুজের আবাদ করা যেতে পারে।
৬/ ঘেরের বেড়িবাঁধে টমেটো, মিষ্টিকুমড়া চাষ করুন।
৭/ বোরো ধানের বীজতলা তৈরী করুন।
৮/ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত খরা সহনশীল ছোলা, মুগ, তিল, তিষি, যব ইত্যাদি বপন করুন।
৯/ খরা সহনশীল কাউন চাষ করুন।
১০/ মাটিতে জো আসার সাথে সাথে শীতকালীন শাক-সবাজী ও বোরো ধানের বীজ বপন করুন।
১১/ গম বীজ বপন সম্পূর্ণ করুন।
১২/ রবি ফসলে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করুন এবং প্রয়োজনে সেচ দিন।
১৩/ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ভুট্টা বীজ বপন করুন।
১৪/ সেচ নালা সংষ্কার ও মেরামত করুন।

 

পৌষ (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারী):

১/ আলুর সবচেয়ে মারাত্মক রোগ হচ্ছে মড়ক। আবহাওয়া ঠান্ডা, ভেজা, মেঘাচ্ছন্ন বা কুয়াশাচ্ছন্ন তাকলে হঠাৎ করে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ ফসল ধবংশ করে দিতে পারে। সুতরাং রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র বা আবহাওয়া পর্যবেক্ষন করে প্রয়োজনীয় দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
২/ বন্যা প্রবণ নিচু এলাকা আগে পানিতে ডুবে যায়। এজন্যে যথাসম্ভব অল্পদিনে পাকে এমন বা আগাম জাতের বোরো ফসলের চাষ করতে হবে যাতে বন্যার পানি আসার আগেই ফসল ঘরে তোলা যায়।
৩/ উপকূলীয় অঞ্চলে রোপা আমন কাটার আগে রিলে খেসারি আবাদ করা যেতে পারে।
৪/ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বোরো ধানের বীজতলা তৈরী করুন।
৫/ বোরো ধান রোপন করুন।
৬/ খরা সহনশীল কাউন চাষ করুন।
৭/ শীতকালীন শাক-সবাজী ও বোরো ধানের বীজ বপন করুন।
৮/ মাসের শেষ সপ্তাহে খিরা, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া চাষ করুন।
৯/ রবি ফসলে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করুন এবং প্রয়োজনে সেচ দিন।

আরও পড়ুন   মৌমাছি পালন ও মধু চাষ

 

মাঘ (মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী):

১/ খরা সহনশীল ফসল ও জাতের আবাদ করা।
২/ দলীয়ভাবে অগভীর/গভীর নলকূপ ও পাওয়ার পাম্পচালু করার প্রস্তুতি নিতে হবে।
৩/ পুকুর, জলাশয়, খাল ও ডোবায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখা।
৪/ উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো মৌসুমে ব্রিধান-৪৭ ও অন্যান্য উপযোগী জাতের আবাদ করা যেতে পারে।
৫/ উপকূলীয় অঞ্চলে এ সময় মুগডাল আবাদ করা যেতে পারে।
৬/ উপকূলীয় অঞ্চলে যেখানে জোয়ার ভাটায় জমিতে পানি জমে থাকে সেখানে সর্জান পদ্ধতিতে সবজি ও ফলের চাষ করার জন্য সর্জান বেড তৈরি করতে পারেন।
৭/ আলু ক্ষেতে মড়ক দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করুন।
৮/ বোরো ধান রোপন করুন।
৯/ খরা সহনশীল কাউন চাষ করুন।
১০/ খিরা, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া চাষ করুন।
১১/ শীতকালীন শাক-সবাজী ও বোরো ধানের বীজ বপন করুন।
১২/ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বোরো ধানে উপরি সার প্রয়োগ করুন।
১৩/ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে উফশী আউশের আগাম বীজতলা তৈরী করুন।
১৪/ গম, সরিষা, ছোলা, তিষি, ভূট্টা ফসলে সেচ দিন।
১৬/ মাসের শেষ সপ্তাহে পুকুর, জলাশয়, খাল, ডোবায় পানি সংরক্ষণ করুন।
১৭/ রবি ফসলে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করুন এবং প্রয়োজনে সেচ দিন।

 

ফাল্গুন (মধ্য ফেব্রুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ):

১/ এ সময় বৃষ্টি নির্ভর উফশী আউশ হিসাবে নিজামী (বি আর-২০), নিয়ামত (বি আর-২১) এবং রহমত (বি আর-২৪) জাতের চাষ করা যায়।
২/ ঝড় ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে পেঁয়াজ আগেই তোলা যেতে পারে।
৩/ পানির অপচয় রোধ ও সহজে চলাচলের জন্য সঠিকভাবে সেচ নালা তৈরি ও যথাসময়ে মেরামত করা।
৪/ পানির অপচয় কমাতে মাদা ফসল, যেমন-করলা ও লাউ চাষ করা।
৫/ খড়-কুটা, পাতা, আগাছ ও কচুরিপানা দ্বারা মাটির উপরের স্তরে মালচিং দিলে মাটির রস মজুদ থাকে। তাছাড়া মাটির উপরের স্তর ভেঙ্গে মালচিং করলে জমির রস সংরক্ষণ করা যায়।
৬/ দলীয়ভাবে অগভীর/গভীর নলকূপ ও পাওয়ার পাম্পচালু করার প্রস্তুতি নেয়া।
৭/ উপকূলীয় অঞ্চলে খেসারি, মুগ,ফেলন ডাল আবাদ করুন।
৮/ বরেন্দ্র অঞ্চলে রোপা আমনের ক্ষেতে কুল বাগান স্থাপন করা যেতে পারে।
৯/ পুকুর, জলাশয়, খাল ও ডোবায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখা।
১০/ গ্রীষ্মকালীন মুগডাল চাষ করুন।
১১/ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে সম্পূরক সেচের জন্য ক্ষেতের / মাঠের এক কোনে মিনি পুকুর খনন করুন।
১২/ বোরো ধানে উপরি সার প্রয়োগ করুন।
১৩/ উফশী আউশের আগাম বীজতলা তৈরী করুন।
১৪/ গম, সরিষা, ছোলা, তিষি, ভূট্টা ফসলে সেচ দিন।
১৫/ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গম কেটে শুকিয়ে সংরক্ষণ করুন।

 

চৈত্র (মধ্য মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল):

১/ বন্যাপ্রবণ নিচু এলাকা পানিতে আগে ডুবে যায়। এজন্যে এসব এলাকায় যথাস¤ভব অল্পদিনে পাকে এমন বা আগাম জাতের আউশ ফসলের চাষ করতে হবে যাতে বন্যার আগেই ফসল তোলা যায়।
২/ আউশ ধানের জমি সমান করে তৈরী ও আইল মেরামত করা উচিত যাতে বৃষ্টি বা সেচের পানির সদ্ব্যবহার হয়।
৩/ নীচু এলাকায় আউশ ও বোনা আমন চাষের উপযুক্ত সময় চৈত্র মাস।
৪/ বন্যামুক্ত এলাকায় গ্রীষ্মকালীন ভুট্টার এবং মুগডালের চাষ করা যেতে পারে।
৫/ অগভীর নলকূপ মাটির গভীরে স্থাপন করা যেতে পারে।
৬/ খড়-কুটা, পাতা, আগাছা,কচুরিপানা দ্বারা মাটির উপরের স্তরে মালচিং করলে মাটির রস রস মজুদ থাকে। মাটির উপরের স্তর ভেঙ্গে মালচিং করলে জমির রস সংরক্ষণ করা যায়।
৭/ দলীয়ভাবে অগভীল/গভীর নলকুপ ও পাওয়ার পাম্প চালুর প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে।
৮/ পুকুর, জলাশয়, খাল ও ডোবায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখা।
৯/ বৃষ্টির অভাবে এমাসে মাটিতে রস কমে যায়। এঅবস্থায় গাছের গোড়ায় পানি দিন, মালচিং করুন।
১০/ সম্পূরক সেচের জন্য ক্ষেতের / মাঠের এক কোনে মিনি পুকুর খনন করুন।
১১/ জলী আমনের বীজ বপন করুন।
১২/ পাট বীজ বপন করুন।
১৩/ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হলুদ রোপন করুন।
১৪/ গম কেটে শুকিয়ে সংরক্ষণ করুন।

১.কৃষিবিদ মো: নজরুল ইসলাম, কৃষিবিদ ড. আবু ওয়ালী রাগিব হাসান এবং কৃষিবিদ মাঝহারুল আজিজ)

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web