আজ রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন

লাউয়ের ফলন বৃদ্ধির উপায়

লাউয়ের ফলন বৃদ্ধির উপায়

লাউয়ের ফলন বৃদ্ধির উপায়

সবজির মধ্যে লাউ অন্যতম। লাউয়ের বাজারমূল্য এখন অনেক। এর উত্পাদন বাড়ালে কৃষক লাভবান হবে ক্রেতারাও কম দামে লাউ কিনতে পারবে। লাউ গাছে প্রচুর ফুল ধরলেও লাউ ধরে কম। কিছু কৌশল জানা থাকলে অধিকাংশ ফুল থেকেই লাউ ধরানো সম্ভব।

লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, কাঁকরোল, পেঁপে ইত্যাদি সবজি গাছ একলিঙ্গ এবং ভিন্নবাসী উদ্ভিদ হওয়ায় প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হয়। অর্থাত্ এসব গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক পৃথক হয়। পুরুষ ও স্ত্রী গাছও পৃথক হয়। ফলে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল যদি দূরে থাকে তবে কীট-পতঙ্গ, পোকা-মাকড় অথবা অন্য যেকোনো

পরাগায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরাগায়ন সম্ভব হয় না। এ জন্য লাউ ধরে না। পুরুষ গাছ বা পুরুষ ফুল থেকে ফল হয় না। লাউয়ের পুরুষ গাছ ও স্ত্রী গাছ পৃথক হওয়ায় কৃত্রিমভাবে পুরুষ ফুল এনে স্ত্রী ফুলের সঙ্গে মিলন ঘটাতে হয়।

কৌশল:প্রতিদিন ভোর বেলায় সদ্যফোটা পুরুষ ফুল ছিঁড়ে পুংরেণুসমৃদ্ধ পুংকেশর রেখে পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হয়। এরপর পুংরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে হালকাভাবে সামান্য একটু ঘষে দিতে হয়। এতে স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হয়ে ফল ধরে। একটি পুরুষ ফুলের পুংকেশর দিয়ে ৬ থেকে ৭টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরাগায়ন করা যায়। এ জন্য একটা লাউয়ের মাচায় শতকরা ১০টা পুরুষ ফুল রাখতে হয়। এতে শতকরা ৯৫টি স্ত্রী ফুলে ফল ধরবে। এ জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুল চেনা প্রয়োজন।

ফুল চেনার উপায়:পুরুষ ফুল:ফুলের বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে। পাপড়ির গোড়ায় গর্ভাশয় থাকে না। পাপড়ির মাঝখান দিয়ে বেড়ে যাওয়া পুংদণ্ডে পাউডারের গুঁড়ার মত পুংরেণু থাকে। পুংদণ্ডের শীর্ষভাগে গর্ভমুণ্ড থাকে না। শুধু বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে থাকা ফুলগুলো পুরুষ ফুল।

স্ত্রী ফুল:ক্ষুদ্রাকৃতি লাউয়ের মত গর্ভাশয়ধারী ফুলগুলো স্ত্রী ফুল। গর্ভাশয়ের ওপর থেকে পাপড়ি থাকবে। পুংদণ্ড থাকবে না। গর্ভদণ্ড ছোট ও মোটা। গর্ভদণ্ডে আঠালো পদার্থ থাকবে। পুংরেণু এখানে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঠায় আটকে যায়। অনেকেরই ধারণা, শুধু স্ত্রী ফুলের এই গর্ভাশয় থাকলেই লাউ ধরবে। গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু না লাগা পর্যন্ত লাউ ধরবে না।

আরও পড়ুন   লেবু খান ওজন কমান

অন্যান্য কৌশল:১. গর্ভাশয় ঝরে পড়াকে অনেকেই মনে করে কচি লাউ ঝরে পড়ে। সত্যিকারে তা নয়। যেসব স্ত্রী ফুল পুংরেণু দ্বারা নিষিক্ত হয় না অর্থাত্ পরাগায়ন হয় না সেগুলো ঝরে পড়ে। এ জন্য উপরোক্ত নিয়মে কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে। এর পরেও ঝরে পড়লে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিতে হবে। গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমপি সার গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দূর দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। ২. কচি লাউ পচে যাওয়ার কারণ হচ্ছে ফ্রুট ফ্লাই পোকা কচি লাউয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে। এ ক্ষতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে লাউ পচিয়ে ফেলে। এ পোকা হাত দ্বারা মারা যায়। ছাই দেয়া যেতে পারে। অথবা ডায়াজিনন/ডাইমেক্রন/নগস দিতে পারেন। ৩. লাউ গাছ খুব বড় হয় কিন্তু ফুল কম ধরে। এ জন্য জৈব সার কম দিতে হবে। টিএসপি ও এমপি সার সম্পূর্ণ মাত্রায় দিতে হবে। এছাড়াও গ্রোথ হরমোন সেপ্র করতে পারেন। ৪. ফুলের মধ্যে পিঁপড়া আক্রমণ করলে ছাই অথবা সেভিন দিতে পারেন। ৫. ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বিষটোপ অথবা ফাঁদ দিতে পারেন।

লাউ চাষে ওই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারলে লাউয়ের ফলন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।

লেখকঃ কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web