আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন
যে কোনো অনুষ্ঠানের পরিপূর্ণতা আনে এক গুচ্ছ ফুল। ফুল পছন্দ করে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। নিজেদের একান্ত মুহূর্ত রাঙিয়ে তোলা থেকে শুরু করে নতুন পথ চলার সময়কে সরণীয় করে রাখতে ফুলের তুলনা মেলা ভার। আর এসব ফুলের মধ্যে গোলাপের নাম আসে একটু আলাদা ভাবে। গোলাপের যেমন আছে নিজস্ব এক অভিরূপ তেমনি এর শোভা সৌন্দর্য পিয়াসু মানুষের কাছে এক পরিতৃপ্তি। গোলাপ মূলত শীতকালীন ফুল।
তবে এর চাহিদা আর সৌন্দর্য একে বছরের সব সময় হাতের নাগালে নিয়ে এসেছে। একটা সময় বছরের কেবল একটি মৌসুমে এ গোলাপ গাছের চাষ করা হলেও এখন এর চাষ করা হয় সারা বছরজুড়ে।
গোলাপের মাঝেও আছে নানা রঙের আর ধরনের ভিন্নতা। অনেকের দৃষ্টি কেবল লাল গোলাপ পর্যন্ত সীমিত থাকলেও কালো, খয়েরি, গোলাপি, সাদা গোলাপের মতো নানা রঙের গোলাপ সবাইকে আকৃষ্ট করে। গোলাপ মূলত শীত আর নাতিশীতোষ্ণ জাতীয় ফুল। বেশি উষ্ণ কিংবা আদ্র কোনো আবহাওয়াই গোলাপ গাছের জন্য উপযুক্ত নয়। আমাদের দেশীয় তাপমাত্র অনুযায়ী ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্র এবং দোআঁশ মাটি গোলাপ চাষের জন্য উপযুক্ত।
অন্যদিকে গোলাপের চারা রোপণের দিকে নজর দিলে বছরের শেষ সময় যেমন অক্টোবর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাস গোলাপের চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত সময়। তবে সব ধরনের গোলাপের জাত এ ধরনের আদ্রতায় চাষ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আদ্রতা এবং আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে মিরান্ডি, ডাবল ডিলাইট, তাজমহল প্যারাডাইজ জাতীয় গোলাপ চাষ করা সম্ভব।
গোলাপ চাষের জন্য যেমন উর্বর মাটি প্রয়োজন তেমনি তার ব্যাপ্তি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মাটির দিক থেকে অনেকেই এঁটেল মাটি নির্বাচিত করে থাকে গোলাপ চাষের জন্য। তবে যারা টবে সীমিত পরিসরে গোলাপ গাছের চাষ করে থাকেন তাদের জন্য দোআঁশ মাটি ব্যবহার করতে না পারলেও এঁটেল মাটি ফুরফুরে করে হালকা হাতে সারের সঙ্গে মিশ্রণ করে টবে লাগাতে পারেন। যারা টবে গোলাপের চারা রোপণ করে তারা গাছ যেন পর্যাপ্ত রোদ পায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
গ্রীষ্মের সময় গাছে প্রয়োজন বুঝে দুই বেলা অন্তর অন্তর পানি দিতে হবে এবং প্রখর রোদে গাছ যাতে দীর্ঘ সময় না থাকে সেই দিকে নজর দিতে হবে। গাছকে রোদ থেকে রক্ষা করতে বেড়া কিংবা রোদের দিক থেকে বারবার গাছের মুখ ঘুরিয়ে দেয়া যাতে পারে। গোলাপ গাছের বেড়ে ওঠার জন্য মাটির পাশাপাশি সারের গুরুত্ব অসীম। এ ক্ষেত্রে মাটি প্রস্তুতকরণ গোলাপ চাষের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।
মাটি তৈরির জন্য চার ভাগ দোআঁশ মাটি, দুই ভাগ গোবর সার কিংবা কম্পোস্ট, আড়াই ভাগ পাতা পচা সার, দুই ভাগ বালি, দুই থেকে তিন মুঠ সরিষার খৈল, তিন চামচ চুন মিশিয়ে এক থেকে দেড় মাসের জন্য রেখে দিলে তৈরি হয়ে যাবে গোলাপের চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত মাটি। গোলাপের চারা রোপণের পাশাপাশি কলমের মাধ্যমেও এর বিস্তার সম্ভব।
চারা প্ল্যাস্টিকের গোল্লাসহ পলিথিন ব্যাগে কিংবা ছোট আকারের টবে কিনতে পাওয়া যায়। চারাটি যদি মাটির টবের হয় তাহলে তা খুব সাবধানে টব থেকে তুলে শিকড়সহ তা শুকনো মাটিতে রোপণ করতে হবে। এরপর পানি দিতে হবে। চারা রোপণের ছয় মাস অন্তর অন্তর এটিকে ছাঁটাই করে নির্দিষ্ট আকারে নিয়ে আসতে হবে যাতে গাছ পর্যাপ্ত জায়গা পায় তার নিজের জন্য। মাসে অন্তত একবার জৈব সার কিংবা ডিমের খোসা পচিয়ে তা মাটির সঙ্গে মিক্স করে ওপরের মাটি নিচে আর নিচের মাটি উল্টে পাল্টে দিতে হবে।
গাছের নিচে পানি জমা হয়ে থাকলে গাছ মারা যায়। তাই টবের নিচে ফুটো করে দিন যাতে পানি জমতে না পারে। গাছের পরিচর্চা ব্যতীত ফুলের প্রতিও বাড়টি যত্ন আব্যশক। ফুল উৎপাদনের জন্য পাতা সার আর ফলিয়ার স্প্রে খুব জনপ্রিয়। কয়েকটি রাসায়নিক সারের মিশ্রণে মূলত এটি তৈরি হয়।
এ ফলিয়ার স্প্রে তৈরি করতে ইউরিয়া, ডাই অ্যামোনিয়া সালফেট, ডাই পটাশিয়াম ফসফেট প্রতি দশ থেকে বারো গ্রাম গাছ বুঝে আবশ্যক। অনেক সময় গাছের পাতায় পোকার উপস্থিতি গাছের শক্তি কমিয়ে আনে। এতে করে গাছে ফুল কম ফুটে এবং খুব জলদি গাছ মুছড়ে যায়।
সেই ক্ষেত্রে ফেরাস সালফেট, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট পাঁচ থেকে দশ গ্রাম করে পানিতে মিশিয়ে গাছের পাতার উভয় পাশে স্প্রে করলে তাতে পোকার উপদ্রব কমে যায়। এছাড়া শুয়ো পোকা বিশাল আকার গোলাপের বাগান নিধন করতে সব চেয়ে বড় শত্রু। তাই এগুলো যতটা সম্ভব মেরে ফেলা আবশ্যক।
গোলাপ গাছের এসব সমস্যা ছাড়াও আরও একটি সমস্যা হচ্ছে গাছের নানা অংশ কালো হয়ে মরে যাওয়া। এ রোগটিকে ডাইব্যাক বলে। এর প্রতিকার পেতে গাছের সেই রোগাক্রান্ত অংশটি কেটে ফেলে দিন। এছাড়া পাতায় সাদা ফুকরি আকাড়ে ছোট ছোট দানা এক ধরনের ছত্রাকের উপস্থিতি। এটি দূর করতে ডাইথেন এম-৪৫ স্প্রে করলে গাছের এই ছত্রাক দূর হয়। এসব পরিচর্যা বাদেও প্রতিনিয়ত বাগানের দেখভার, পানি দেয়া এবং মাসে অন্তত সার দেয়া গোলাপ গাছ বেড়ে তুলতে আবশ্যক।