গাড়ল পালন পদ্ধতি বিস্তারিত

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

গাড়ল পালন পদ্ধতি বিস্তারিত

“গাড়ল” (ভারতীয় জাতের ভেড়া) পালন খুবই লাভজনক। এতে খরচ কম অথচ লাভ অনেক বেশি। দেশে গাড়ল পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এর মাংসের চাহিদা ব্যাপক। ভালো দাম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে (মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা) জেলায় গাড়ল পালন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের তারানগর গ্রামের মিস্ত্রিপাড়ার দবিরউদ্দিন গাড়ল পালনে সফলতা পাওয়ার পর একই গ্রামের অনেকে এদিকে ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে ওই গ্রামের প্রায় ২০ ঘর মানুষ গাড়ল পালন করছেন। মুজিবনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দেশে গাড়ল পালনে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান। গাড়ল পালন একদিকে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গাড়ল পালনে অধীক লাভ করা এবং ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে চাইলে যে তথ্য গুলো আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে……

গাড়ল নির্বাচন পদ্ধতি:

পালনের জন্য প্রথমে গাড়ল নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ন ধাপ। খামারের লাভ অনেকাংশে নির্ভর করে, উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের সুস্থ সবল গাড়ল নির্বাচনের উপর। পালনের জন্য ৭ থেকে ১২ মাস বয়সের সুস্থ গাড়ল নির্বাচন করা উচিত।

গাড়ল পালন ও সুস্থ গাড়ল চেনার উপায়:


১. চোখ, নাক, মুখ উজ্জল ও পরিস্কার হবে।
২.লোম ও চামড়া মসৃন ও পরিস্কার থাকবে।
৩.মুখের উপরে মাজেলে ( কালো জায়গায় ) বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাবে।
৪. ঠিকমত জাবর কাটবে।
৫.চলাফেরা স্বাভাবিক থাকবে।
৬. কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
৭. খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকবে।
৮. শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
৯. প্রস্রাব পায়খানা স্বাভাবিক হবে।
১০.কোনো অচেনা লোক কাছে আসলে সতর্ক হয়ে উঠবে।
১১. মশা মাছি তাড়াবে।
১২. দলবদ্ধ ভাবে মাঠে চড়বে ।

খাদ্য ও বাসস্থান:
গাড়লের খাবারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়……
১. গাড়ল চরে খেতে পছন্দ করে। তবে আবদ্ধ অবস্থায়ও বাহির থেকে (ঘাস/দানাদার) খাদ্য সরবরাহ করে পালন করা যায়।
২. ছাগলের মতোই লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছের পাতা এরা খুব পছন্দ করে।
৩. শুকনো ও সংরক্ষিত ঘাস এবং দানাদার খাদ্য এরা খেয়ে থাকে।
৪. এমনকি খাদ্যের অভাব দেখা দিলে গাড়ল খড় ও নাড়া খেয়ে থাকতে পারে।

বিশেষ করে………

৫. পাঠা গাড়ল কে পর্যাপ্ত পরিমান কাচা ঘাস দিতে হবে।
৬. প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পাঠাকে দৈনিক ১০ গ্রাম অঙ্কুরিত ছোলা দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. কাচা ঘাসের পরিমান কম হলে বছরে অন্তত ২ বার ভিটামিন এ.ডি.ই. ইনজেকশন ২ থেকে ৩ মি.লি. করে দিতে হবে।
৮. পাঠাকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য দেয়া যাবে না।

বাড়ন্ত গাড়লের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো:
গাড়লের ওজন (কেজি)দানাদার খাদ্য(গ্রাম)ঘাস সরবরাহ(কেজি)
১০০০.৫
২০০০.৮
২৫০১.০
১০৩০০১.৫- ২.০
১২৩৫০২.০- ২.৫
১৪৪০০২.৫-৩.০
১৬৪৫০৩.০-৩.৫
১৮৫০০৩.৫-৪.০
বাসস্থান তৈরীতে করনীয়:

এটার উপর লাভক্ষতি, উৎপাদন, গাড়লের পরিচর্যা, রোগাক্রান্ত হওয়ার হার ইত্যাদি নির্ভর করে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় গাড়লের বাসস্থানের জন্য খোলামেলা ও উচু স্থান নির্বাচন করা উচিত ।

আরও পড়ুন   স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গাভীর দুগ্ধ উৎপাদন উৎপাদন পদ্ধতি

রোদ-বৃষ্টি-ঝড় ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করা, বিশ্রাম, খাদ্য প্রদান, সঠিক প্রজনন নিশ্চিতকরণ, মলমূত্রের সুষ্ঠ নিষ্কাসনের ব্যবস্থা, ইত্যাদি বন্দোবস্ত করে গাড়লের জন্য ঘর তৈরী করতে হবে।
ঘরে মাচার উপর গাড়ল থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। মাচা তৈরী সম্ভব না হলে, মেঝেতে শুকনো খড়ের বিছানা দিতে হবে। শীতকালে মাচাতেও খড়ের বিছানা দিতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চা কে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে হবে,ভেজা খর শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

বাসস্থানের বৈশিষ্ট আদর্শ:

১.গাড়লের ঘর উচু ও খোলামেলা জায়গায় হতে হবে।
২.পানি নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৩.আরামদায়ক হতে হবে।
৪.ঘরের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক হতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫.বর্জ্য নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে।
৬.সহজলভ্য ও সস্তা নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
৭.ঘরের মাঝে বেড়া বা পার্টিশন দিয়ে গর্ভবতী গাড়ল বা ছোট বাচ্চা কে আলাদা রাখার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী যত্ন ও সেবা দেয়া যায়।

অন্যান্য করনীয় বিষয়:

১. প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে খাবার দিতে হবে।
২. বাসস্থান নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে ও শুস্ক রাখতে হবে।
৩.মলমূত্র এবং ঘর সংলগ্ন ড্রেন বা নালা নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।
৪. নিয়মিত গোসল করানো ভালো।
৫. তিন মাস অন্তর অন্তর কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।
৬. নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে ( পি.পি.আর, এফ. এম. ডি ইত্যাদি )

গর্ভধারণের কিছু সমস্যার কারণে অনেক সময় গাড়লের বাচ্চা উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্য ব্যাহত হয়। সময়মতো গর্ভধারণ ও বাচ্চা উৎপাদনের সাথে লাভ/ক্ষতির সম্পর্ক রয়েছে। প্রসবের পর যেন পুনরায় সময়মতো গর্ভধারণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যায় বাচ্চা প্রসবের দু – তিন মাস পরেও কিছু গাড়ল গর্ভধারণ করে না। অপুষ্টি, কৃমির আক্রমণ ও প্রজনন ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, প্রসবের আগে ও পরে সুষম খাদ্য না খাওয়ানো, জননাঙ্গে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, ইত্যাদি কারণে এমনটা হতে পারে। গাড়লের ডাক আসলে সঠিক সময়ে প্রজনন করানো উচিত।

প্রজনন ব্যবস্থাপনা, (আগে ও পরে)

গাড়ল পালনের ক্ষেত্রে প্রজননকালীন ব্যবস্থাপনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। যে বিষয় গুলকে গুরুত্ব দিবেন…..
১. গাড়ল সাধারনত ১৮০ দিন বয়সের মধ্যে প্রথম বাচ্চা ধারণ করে।
২. গাড়লের হৃতুচক্র ১৩-১৯ দিন বা গড়ে ১৭ দিনে সম্পন্ন হয়।
৩. গাড়লের গরমকাল বা হিট প্রিয়ড ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্তু স্থায়ী হয়।
৪. গর্ভধারণ কাল ১৪৫ থেকে ১৫০ দিন।

লক্ষণীয় বিষয়….

আমাদের দেশে সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গির জন্য অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ছাগলের খামার করতে পারেননা, শুধুমাত্র পাঠা পালনগত কিছু অসুবিধার জন্য। যেমন, পাঠার শরীরের দুর্গন্ধ, শ্রুতিকটু শব্দ, পরিচর্যাগত সমস্যা ইত্যাদি। অন্যদিকে, ছাগল গরম হলেও কয়েকদিন পর্যন্তু প্রচুর ডাকাডাকি করতে থাকে উচ্চস্বরে। একটি বানিজ্যিক খামারে অসংখ্য ছাগল/গাড়ল যদি অনবরত ডাকাডাকি করতে থাকে তাহলে সেটা সত্যি বিরক্তিকর হয়ে দাড়ায়। কিন্তু গাড়লের একটি বিশেষ দিক হলো, গরম হলে গরু ছাগলের মত এতো ডাকাডাকি করে না। পাঠা গাড়লের শরীরেও দুর্গন্ধ হয়না। পাঠা গাড়ল কে একই দলের সাথে ছাড়া অবস্থায় রাখা যায়। অধিক সংখ্যক গাড়লের মধ্যেও পাঠা গাড়ল শুধুমাত্র গরম হওয়া গাড়লটির প্রতিই আকৃষ্ট হবে, তাই এজন্য খামারীকে আলাদা কোনো ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়না।

আরও পড়ুন   উন্নত গুনাগুনসম্পন্ন ছাগল নির্বাচন কৌশল

কিন্তু যদি পাঠা গাড়ল বেধে বা আলাদা পালন করা হয়, তাহলে প্রজনন করানোর নিয়ম:

গরম হওয়ার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করাতে হবে। কোনো গাড়ল রাতে গরম হয়েছে মনে করলে, পরদিন সকালে একবার এবং আরো নিশ্চিত হবার জন্য ঐ দিন বিকালে একবার ও পরদিন সকালে আরো একবার প্রজনন করানো ভালো। এ নিয়ম মেনে চললে, গাড়লের প্রজনন ব্যবস্থাপনার ত্রুটি কমানো সম্ভব এবং গর্ভধারণের সম্ভবনা ও অনেক বেশি থাকে।

প্রসবের পূর্বে করণীয়:

১.গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে গাড়ল কে কোনো কৃমিনাশক খাওয়ানো যাবেনা।
২. গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে গাড়ল কে নরম বিছানা দিতে হবে।
৩. গর্ভবতী গাড়ল কে আলাদা রাখতে হবে।
৪. গর্ভবতী গাড়ল কে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে। গমের ভুষি, কাচা ঘাস, তিলের খৈল, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন প্রিমিক্স।

প্রসবের পর করণীয়:

খুব সামান্য ক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসবের পর কোনো কোনো গাড়লের জরায়ু বাইরে বেরিয়ে আসে। এ সমস্যা বাচ্চা প্রসবের ৪ – ৬ ঘন্টার মধ্যে দেখা যায়। প্রসবের সময় হ্যাচকা টান দিয়ে বাচ্চা বের করা হলে এমনটি হতে পারে। বয়স্ক গাড়লের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে বেশি। গর্ভের সময় ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলেও এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরবর্তিতে মা – গাড়লের জরায়ুতে প্রদাহ দেখা দেয় এবং গর্ভধারণ বিলম্বিত হয়। এ ক্ষেত্রে , শরীরের তাপ পরীক্ষা করে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে খুব ধীরে, সতর্কতার সাথে ৩০-৫০ মি.লি. ক্যালসিয়াম বরেগ্লুকনেট, ক্যালডিম্যাক, কোপাক্যালসিয়াম, ক্যাজেসন, ক্যালসিনেট অথবা ক্যালসির যেকোনো একটি ইনজেকশন শিরায় প্রয়োগ করতে হবে। এর সাথে ১-২ আই .ইউ. অক্সিটোসিন (যেমন – অক্সিন, ইন্টাটোসিন-এস, পিটন-এস অথবা হিন্টোসিনিনের যেকোনো একটি ) ইনজেকশন মাংসে ৩-৪ মিনিট পর পর ৪-৫ বার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বাচ্চার প্রতি যত্ন নিতে করণীয়:

বাচ্চা প্রসবের সময় গাড়ল কে শুকনো, পরিচ্ছন্ন ও আলোবাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। বাচ্চার শরীর যাতে মা-গাড়ল চেটে পরিস্কার করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চালুর জন্য সহায়ক হয়। মার যদি দুর্বলতা বা অন্য কোনো কারণে বাচ্চার শরীর চাটতে না পারে, তাহলে পরিস্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে বাচ্চার নাক-মুখ মুছিয়ে দিতে হবে না হলে শ্বাস রুদ্ধ হবার ঝুকি থাকে। আর যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে বাচ্চার বুকের পাজরে আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ পর পর চাপ প্রয়োগ করলে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রয়োজনে নাকে-মুখে ফু দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে কৃত্তিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চার জন্মের পর গোসল করানো যাবেনা, এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হতে পারে।
আমাদের দেশে উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় বাচ্চার জন্মের পরেই শ্বাস কস্ট দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে বাচ্চাকে শুকনো জায়গায়, বিশেষ করে বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখতে হবে। জন্মের পরে অবশ্যই বাচ্চার নাক, মুখ, পায়খানা – প্রস্রাবের রাস্তা ও নাভির স্থানে ফোলা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এগুলোর কোনো একটিতে ত্রুটি দেখা গেলে, অতিসত্তর নিকটস্থ পশুহাপাতালে / ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শমতো চিকিৎসা দিতে হবে।

আরও পড়ুন   ময়ূরী কবুতর পালন করে আয়

জন্মের পর থেকে শুরু করে নাভি না শুকানো পর্যন্তু ( ৭ থেকে ১৪ দিন ) বাচ্চার নাভিতে তুলা দিয়ে টিংচার আয়োডিন বা জেনসণ ভায়োলেট লাগাতে হবে। যদি নাভি ফুলে পুজ জমে তাহলে অবশ্যই জীবানুনাশক ( যেমন – পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানেট , স্যাভলন ২.৫% ইত্যাদি ) নির্দেশিত মাত্রায় ফুটানো ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে নাভি পরিস্কার করতে হবে। এছাড়া ক্ষত স্থানে দিনে ২ -৩ বার নেবানল পাউডার লাগাতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অথবা ওষুধের নির্দেশিকা অনুসারে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন ( যেমন- প্রোনাপেন , পেনিসিলিন , পেনবাসিলিন , প্রোনাসিলিন ইত্যাদির যেকোনো একটি ) ৩ – ৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। জন্মের ৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চাকে মায়ের বাটে মুখ লাগিয়ে অবশ্যই শাল দুধ পান করাতে হবে।


কমপক্ষে ৩ দিন পর্যন্তু শালদুধ পান করানো আবশ্যক। শালদুধে পর্যাপ্ত পরিমানে রোগ প্রতিরোধী উপাদান থাকে। ঠিকমত শালদুধ না খাওয়ালে বাচ্চা বিভিন্ন রোগে সহজেই আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চা দুধ টেনে খেলে মা-গাড়লের গর্ভফুল ৮-১২ ঘন্টার মাঝে পরে যায়।

রোগ ব্যাবস্থাপনার উত্তম পন্থা:

খামারের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, রোগ প্রতিরোধের প্রথম শর্ত। তাই খামারে সকল সময় পরিচ্ছন্ন, খোলামেলা ও পর্যাপ্ত আল-বাতাসের ব্যাবস্থা রাখতে হবে। গাড়লের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। তবে বানিজ্যিক খামারে নিয়মিত টীকা প্রদান জরুরী। মোটামুটি নিয়মানুযায়ী ৩ টি টীকা প্রদান করলে, রোগ-বালাই থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা সম্ভব।


টীকার নাম——————–পরিমান———প্রয়োগ পদ্ধতি
পিপিআর———————- ১ মিলি———চামড়ার নিচে ইনজেকশন
ক্ষুরা রোগ——————— ২ মিলি——— ঐ
এন্থ্রাক্স———————— ১ মিলি——— ঐ

অন্যান্য বিষয়াবলী….

আমাদের দেশে চারণভূমি, খামারির সামর্থ্য, খামারের ধরন ও অন্যন্য সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে গাড়ল পালন করা যায়। যেমন:-

১. অধানিবিড় (সেমি ইনসেনটিভ ) খামার:


এ ধরনের খামারে, খামারিগণ এককভাবে বা গরু-ছাগলের সাথে মিশ্রভাবে অল্প সখ্যক গাড়ল পালন করেন।
রাতে আলাদা ঘরে বা গরুর সঙ্গে রাখা হয়। দিনে ফসলের খালি মাঠ, রাস্তা বা বাধের ধারে, গাছের বাগানের মধ্যে ছেড়ে বা বেধে পালন করা হয়। সকালে বা সন্ধ্যায় কখনো কখনো সামান্য কুড়া, ভুষি ও ভাতের মাড় দেয়া হয়।


২. সম্পুর্ন ছেড়ে পালা ক্ষুদ্র বানিজ্যিক খামার:


এ ধরনের খামার অধানিবিড় খামারের মতোই। তবে এ রকমের খামারে গাড়লের সংখ্যা বেশি থাকে। খামারি মূলত বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে গাড়ল পালন করে থাকেন। এ ধরনের খামারে সাধারনত সুনির্দিস্ট কোনো খাদ্য ব্যবস্থাপনা নেই। সাধারনত মাঠে চরানোর মাধ্যমেই গাড়লের খাদ্য চাহিদা মেটানো হয়।
৩.অধানিবিড় বানিজ্যিক খামার: অপেক্ষাকৃত সচ্ছল খামারিগণ অধানিবিড় বানিজ্যিক খামারে ১০০ থেকে ১৫০ গাড়ল পালন করেন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করা হয় আবার মাঠেও চরানো হয়।
৪. নিবিড় পালন ব্যবস্থা: এ ধরনের খামার ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ বদ্ধভাবে গাড়ল পালন করা হয়। এক্ষেত্রে খামারিদের ঘাস চাষ করতে হয়, ঘাস কেটে আনতে হয় ও অন্যান্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হয়। এ ধরনের খামারে যথাযথ আবাসন ব্যবস্থা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, সুষ্ঠ খাদ্য ব্যবস্থাপনা একান্ত জরুরি। গাড়ল পালনের উত্তম পন্থা এবং গাড়ল পালন: বেকারের বেকারত্ব দূরীকরণের উত্তম পন্থা সর্ম্পকে আরো জানতে আমাদের সংঙ্গে থাকুন।

ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট – নাজ ফার্ম

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now