মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ০২:৩০ অপরাহ্ন

গবাদী পশু প্রাণির জাত পরিচিতি

  • লাস্ট আপডেট : রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
  • ১৭৮ টাইম ভিউ
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
জাতঃ ইহা একটি বিশেষ গোষ্ঠি, যাহার সদস্য সদস্যাবৃন্দ একই চারিত্রিক বৈশিষ্টের অধিকারী এবং ঐ চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলি বংশ পরম্পরায় সমভাবে বিদ্যমান।
গবাদি পশুর জাতকে সাধারণতঃ ৩টি উপায়ে বিভক্ত করা যায়। যথাঃ
  • উৎপত্তি ও আকার অনুসারে
  • ব্যবহার বা কাজ দ্বারা
  • জাতির মৌলিক্ত বা বিশুদ্ধতার পরিমান দ্বারা
কাজ বা ব্যবহার অনুযায়ী জাত বিভাগঃ
  • দুধাল জাতঃ জার্সি, হলেষ্টিন ফ্রিজিয়ান, গোয়েনারসি, শাহীওয়াল ইত্যাদি
  • মাংশাল জাতঃ হারফোর্ড, এবার্ডিন, এ্যাংগাস, শর্টহর্ন ইত্যাদি
  • শ্রমশীল জাতঃ ধান্নী, এ্যাংগোলা ইত্যাদি
  • বিবিধঃ সিন্ধি, হারিয়ানা, থারপারকার
মৌলিকত্ব বা বিশুদ্ধতার পরিমিতি অনুসারে জাত বিভাগঃ
  • মৌলিক বা বিশুদ্ধ জাতঃ এই জাতভূক্ত গাভীকে অবশ্যই ইহার পূর্ব পুরুষদের সমস্ত শাখার মাধ্যমে সেই জাতির অধদি পুরুষদের সংগে সম্পর্ক রাখতে হবে। যেমন-শাহীওয়াল, জার্সি ইত্যাদি।
  • উন্নীত জাত (গ্রেড): কোন নির্দ্দিষ্ট জাতের ষাঁড়ের সাথে অনুন্নত গাভীর মধ্যে ধারাবাহিক প্রজননের ফলে সৃষ্ট উন্নত জাত। যেমন-শাহীওয়াল, জার্সি ইত্যাদি।
  • দো-আঁশলাঃ দুই মৌলিক জাতের গাভী ও ষাঁড়ের মিলনে বা প্রজননে সৃষ্ট নূতন জাত। যেমন-সিন্ধি শাহীওয়াল দো-আঁশলাঃ
  • গোত্র বিহীনঃ সাদৃস্য বিহীন। যেমন-দেশী গাভী।
জার্সি:
উৎপত্তি : জার্সি, ওয়েনসি এ্যাল্ডার্লি ও সার্ক চ্যানেল দ্বীপ সমূহ জার্সি গাভীর উৎপত্তিস্থান।
সাধারন বৈশিষ্ট্য: বিদেশী দুধাল গাভীর মধ্যে জার্সির আকার সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকার। গাভীর ওজন ৪০০-৪৫০ কেজি এবং ষাঁড়েন ওজন ৬০০-৮৫০ কেজি। ওলান বেশ বড়। মাথা ও ঘাড় বেশ মানানসই । শিরদাঁড়া সোজা এবং চুট বিহীন। শরীর মেদহীন। গায়ের রং লাল বা মেহগিনি রং বিশিষ্ট। জিহবা ও লেজ কালো। সদ্য প্রসূত বাচ্চা দৃর্বল ও ছোট হয়। তাই বাচ্চা পালন কষ্টসাধ্য। সদ্য প্রসূত বাচ্চার ওজন ২২-৩৩ কেজি। জার্সি গাভী অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে বয়প্রাপ্তত হয় এবং অনেক বয়স পর্যন্ত দূগ্ধ প্রদানে সক্ষম।
উপকারিতাঃ দূগ্ধ উৎপাদন ও তার মান প্রশংসনীয়। বাৎসরিক দুগ্ধ উৎপাদন ২৭৫০-৪০০০ লিটার। দুধে চর্বির পরিমান  শতকরা ৫ ভাগ।
হলেস্টিন ফ্রিজিয়ানঃ
উৎপত্তি: হল্যান্ডের ফ্রিজিয়ান ফ্রিজিল্যান্ড প্রদেশ।
সাধারন বৈশিষ্টঃ দুধাল জাতের মধ্যে হলেষ্টিন ফ্রিজিয়ান এর আকার সর্ব বৃহৎ। গাভীর গড় ওজন ৬৭৫ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ১০০০ কেজি। শরীরের মধ্য ও পিছন ভাগ ভারী ও ওলান বেশ বড়। পিছনের পা বেশ সোজা। গাভীগুলি বেশ শান্ত কিন্তু ষাঁড়গুলি প্রায় বদ মেজাজী। গায়ের  রং কালো-সাদায় চিত্রা এবং যে কোন প্রকারের প্রাধান্য থাকতে পারে। জন্মের সময়  বাচ্চার গড় ওজন ৪৫ কেজি। হলেস্টিন ফ্রিজিয়নের বয়োপ্রাপ্তি দেরীতে ঘটে।
উপকারিতাঃ বাৎসরিক  দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা ৪৫০০-৯০০০ কেজি। চর্বির পরিমান শতকরা ৩.৫ ভাগ। দূগ্ধবতী গাভীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশী ও মাংশ উৎপাদনকারী জাত।
শাহীওয়ালঃ
উৎপত্তিঃ পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টগোমারী জেলা।
সাধারন বৈশিষ্টঃ শাহীওয়াল গাভী আকারে কিছুটা বড়। গাভীর ওজন ৪৫০-৫৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৬০০-১০০০ কেজি। জন্মকালে বাছুরের ওজন ২২-২৮ কেজি। মাথা প্রশস্ত ও শিং ছোট কিন্তু মোটা। চূট ও গলকম্বল বেশ বড়। ওলান বড় এবং ঝুলন্ত। গায়ের রং সাধারনতঃ হালকা লাল বা হালকা হলুদ। কোন কোন গাভীর শরীরের বিভিন্ন অংশে সাদা রং দেখা যায়। বলদ ও ষাঁড় ধীর ও অলস।
উপকারিতাঃ শাহীওয়াল এই উপমহাদেশের দুধাল গাভী রূপে সুপরিচিত। বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ৩০০০-৪০০০ লিটার। চর্বি পরিমান ৪.৫%।
হারিয়ানাঃ
উৎপত্তিঃ ভারতের রটক, হীসার, গরগাঁও ও দিলস্নী।
সাধারন বৈশিষ্টঃ হারিয়ানা দেখলেই মনে হয় অত্যন্ত পরিশ্রমী ও শক্তিশালী। গাভীর ওজন ৪০০ – ৫০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৬০০ – ১১০০ কেজি। জন্মকালে বাছুরের ওজন ২২ – ২৫ কেজি। মাথা বেশ লম্বা এবং অপেক্ষাকৃত সরু। শিং লম্বা, চিকন ও বাঁকানো। দেহের রং সাদাটে বা হালকা ধূসর।
উপকারিতা: হারিয়ানা দুধ উৎপাদন ও লাংগল বা গাড়ী টানার জন্য উপযোগী। বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ১৫০০ লিটার। দুধে চর্বির পরিমান ৫%। বকনা সাধারণত: ৩ – ৪ বৎসরের পূর্বে গাভী হয় না।
লাল সিন্ধি
উৎপত্তি: পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের করাচী, লাসবেলা ও হায়দারাবাদ।
প্রাপ্তি স্থান: পাকিস্তানের সর্বত্রই পাওয়া যায়। পৃথিবীর  অনেক দেশে যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, সিংহল, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড।
সাধারণ বৈশিষ্ট: গায়ের রং লাল বলে নাম লাল সিন্ধি। গাভীর ওজন ৩৫০ – ৪০০ কেজি ও ষাড়ের ওজন ৪২৫ – ৫০০ কেজি। কপাল প্রশস্ত ও উন্নত, কানের আকার মাঝারী, নীচের দিকে ঝুলানো, ওলান বেশ বড়। শিং খাটো ও মোটা। ঘাড় খাটো ও মোটা। নাভী বড় ও ঝুলানো, বুক প্রশস্ত। গায়ের রং সাধারণত: গাঢ় লাল, কিন্তু কালচে হলুদ থেকে গাঢ় মেটে রং এর হতে পারে। এই জাতের গাভী ৩৫০ দিন দুধ দেয়। দৈনিক উৎপাদন প্রায় ৮-১০লিটার। জন্মকালে বাচ্চার ওজন ২১ – ২৪ কেজি।
উপকারীতা: বাৎসরিক গড় দূগ্ধ উৎপাদন প্রায় ২০০০  লিটার। দুধে চর্বির পরিমান ৫% এর উপরে। এই জাত আমাদের দেশী আবহাওয়ায় মোটামুটি অভিযোজিত। বলদ বা ষাঁড় দ্বারা গাড়ীটানা ও হালচাষ ভাল ভাবে করা যায়। বকনা তিন বছর বয়সেই গাভী হয়ে থাকে।
লাল চাঁটগেঁয়ে সিন্ধি
উৎপত্তি: বাংলাদেশের চট্রগ্রাম ও পার্বত্য চট্রগাম।
সাধারণ বৈশিষ্ট : দেহের আকার ছোট। গায়ের রং হাল্কা লাল। শিং ছোট, পাতলা ও ভিতরের দিকে আংশিক বাঁকানো। গলকম্ব ও মাথা ছোট। কান খাড়া। গাভীর ওজন ২৫০ – ৩০০ কেজি এবং ষাঁড় ৩৫০ – ৪০০ কেজি। ওলান বেশ সুঠাম, বাঁট অপেক্ষাকৃত ছোট। লাল চাঁটগেঁয়ে সিন্ধি বাংলাদেশের একমাত্র বিশুদ্ধ জাত হিসাবে পরিচিত।
ছাগলের জাত
গৃহপালিত পশুর মধ্যে ছাগল অত্যন্ত পরিচিত প্রাণী । এদের স্বাভাবিক জীবনকাল ৮-১০ বৎসর । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩১৩ জাতের ছাগল  পাওয়া যায় । ছাগল জাত ভেদে ১-৬ টি পর্যন্ত বাচচা প্রসব করে থাকে । আকৃতি ও আচরনে অন্যান্য পশুর মত এদের মধ্যেও ভিন্নতা লক্ষণীয় । ছাগলের দুধ, মাংস, লোম ও চামড়ার অর্থকরী সম্পদ। ছাগল পালন করতে হলে ছাগলের বিভিন্ন জাত সমর্পকে জানা প্রয়োজন । পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতের ছাগল রয়েছে তার মধ্যে (১) ব্ল্যাক বেংগল (২) যমুনাপারি (৩) বীটল ইত্যাদি পাওয়া যায়।
১। ব্ল্যাক বেংগলঃ
এ জাতের ছাগল বাংলাদেশর সর্বত্রই পাওয়া যায় এবং এটাই দেশের একমাত্র ছাগলের জাত। উলে­খ্য যে, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিম বাংলা, আসাম ও অন্যান্য রাজ্যেও এই জাতের ছাগল পাওয়া যায়। গায়ের রং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কালো। তবে সাদা-কালো, খয়েরী-সাদা ইত্যাদিও হতে পারে। এরা সাধারনত: আকারে ছোট হয়। তবে মাঝে মাধ্যে এ জাতের বড় ছাগলও দেখা যায়। আমাদের দেশে এদের গড় ওজন যথাক্রমে ৯ থেকে ১৩ কেজি। পূর্ণ বয়স্ক বড় আকারের ছাগল এবং ছাগীর গড়  ওজন যথাক্রমে ৩২ ও ২০ কেজি । ঘাড় এবং পেছনের অংশ উচ্চতায় প্রায় সমান। বুক প্রশস্ত। পা গুলো ছোট ছোট। ছাগ এবং ছাগীর ছোট ছোট সরু এবং উর্দ্ধমুখী শিং আছে। কিন্তু পাঁঠার শিং তুলনামূলক ভাবে বড়, মোটা এবং পিছনের দিকে বাঁকানো। কানের আকার ছোট বা মাঝারী, চোখা এবং শরীরের সাথে সমান্তরাল এবং উর্দ্ধমুখী। গায়ের লোম ছোট ও মসৃন। এরা এক সংগে একাধিক বাচ্চা প্রসব করে। দ্রুত প্রজননশীলতা, সুস্বাদু মাংশ এবং উচ্চমান সম্পন্ন চামড়ার জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পৃথিবী বিখ্যাত।
২। যমুনাপারীঃ
যমুনাপারি ভারতের সবচাইতে বড় এবং রাজকীয় ছাগলের জাত হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশেও এ জাতের ছাগল রয়েছে। এদের শরীর বিরাটাকার। গায়ের রং সাদা ও হলদেটে ধরনের হয়ে থাকে। এদের নাক রোমাদের নাকের মত টিকালো কান দুটো লম্বা, ঝোলানো ও ভাঁজ করা। পা বেশ লম্বা । যমুনাপারী ছাগলের পেছনের পায়ের পিছন দিকে লম্বা লম্বা  লোম থাকে। মাংস ও দুধের জন্য এ জাতের ছাগল পৃথিবীতে বিখ্যাত। বীজ হিসাবে এ জাতের ছাগলের পাঁঠা ভারত থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশেও যমুনাপারি ছাগলের  জনপ্রিয়তা  রয়েছে ।
৩। বীটলঃ
এ জাতের ছাগলের আদি বাস পাকিস্তান ও ভারতের পাঞ্জাবে। এদের মুখ ও নাকের গড়ন যমুনাপারি ছাগলের মত ।
মুরগীর জাত
বিভিন্ন মোরগ-মুরগীর বৈশিষ্ট
মোরগ-মুরগীকে সাধারণত: দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন: হাল্কা (Light) জাত ও ভারী (Heavy) জাত।
শ্রেণী
বংশ
সাধারণ বৈশিষ্ট
আমেরিকা
রোড আইল্যান্ড রেড (আর.আর.আই), নিউহ্যাম্পশেয়ার, পাইমাউথ ইত্যাদি।
পা লোমহীন, চামড়া হলদে, কানের লতি লাল, মাঝারী আকারের শরীর, মাংশ ও ডিম উভয়ের জন্যই ভাল।
ভূমধ্যসাগরীয়
হোয়াইট লেগ হর্ন, ব্যাক মিনারকা, এনকোনা ইত্যাদি। যেমন: ফাইওমি (পাকিস্তানী)
পা লোমহীন, চামড়া হলুদ বা সাদা, কানের লতি সাদা, শরীরের আকার ছোট, খুব বেশী ডিম দেয়, কুঁচে লাগে না।
বিলাতী
সাসেক্স, অষ্টারলর্প, অরপিংটন ইত্যাদি
লোমহীন পা, সাদা চামড়া, কানের লতি লাল, মাঝারী আকারের শরীর, মাংশ ও ডিম উভয়ের জন্যই ভাল।
এশীয়
ব্রাহামা, কোচিন, ল্যাংশায়ার ইত্যাদি
লোমযুক্ত পা, চামড়া হলদে, কানের লতি লাল, আকাওে বড়, মাংশের জন্য ভাল, ঘন ঘন কুঁচে হয়।
বাংলাদেশী
আসিল, চাঁটগাঁয়ে বা মালয়ী
পা লোমহীন, চামড়া হলদে, কানের লতি লালচে, আকারে বেশ বড় ও লম্বা, মাংশের জন্য ভাল। মোরগ লড়াইয়ের জন্য প্রসিদ্ধ।
তথ্য:
তথ্য আপা প্রকল্প
আরও পড়ুন  গরু মোটাতাজাকরন ও ওজন বের করার নিয়ম

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
একই রকম পোস্ট